ইসলামের দৃষ্টিতে স্বাধীনতা ও বিজয় দিবস পালন করার সঠিক পদ্ধতি

ইসলামের দৃষ্টিতে স্বাধীনতা ও বিজয় দিবস পালন করার সঠিক পদ্ধতি

🔴প্রশ্ন-১ দিবস পালন করা কি শিরক নাকি বিদআত? জানিয়ে বাধিত করবেন।

🔴প্রশ্ন-২ ইসলামের দৃষ্টিতে স্বাধীনতা ও বিজয় দিবস পালন করার সঠিক পদ্ধতি

১ নং প্রশ্ন ও উত্তর

প্রশ্ন দিবস পালন করা কি শিরক নাকি বিদআত? জানিয়ে বাধিত করবেন।

✍️উত্তর: দিবস পালন করার মানসিকতা একটি সামাজিক কুসংস্কার। দিবস পালন বলতে মানুষ একটি নির্ধারিত দিনে কিছু করতে চায়। যেমন: জন্মদিন ও মৃত্যুদিনে মানুষ আনন্দ করে, শোক পালন করে, খানা-পিনার ব্যবস্থা করে। ঠিক তেমনি নির্ধারিত দিনে মানুষ তাদের বড় সফলতা এসেছে বলে সেদিন নানা ধরনের অনুষ্ঠান পালন করে থাকে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কলকারখানা ইত্যাদি বন্ধ রাখে। এরকম নির্ধারিত দিনকে কল্যাণকর মনে করা এবং সেই লক্ষ্যে কিছু করা শিরকের অন্তভুর্ক্ত। আবু ওয়াক্বিদ লাইছী রা: হতে বর্ণিত, যখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) হুনাইনের যুদ্ধে বের হলেন, তখন তিনি মুশরিকদের এমন একটি বৃক্ষের নিকট দিয়ে গমন করলেন, যাতে নিজেদের অস্ত্রসমূহ ঝুলিয়ে রাখত। উক্ত বৃক্ষটিকে ‘যাতু আনওয়াত্ব’ বলা হত। এটা দেখে কোন কোন নব্য মুসলিম বলল, হে আল্লাহর রাসূল! ঐ সমস্ত মুশরিকদের ন্যায় আমাদের জন্যও একটি ‘যাতু আনওয়াত্ব’ নির্ধারণ করে দিন। তখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, ‘সুবহানাল্লাহ! মূসা -এর কওম তাঁকে বলেছিল, আমাদের জন্য এরূপ মা‘বূদ নিধার্রণ করে দিন, যেরূপ ঐ কাফের সম্প্রদায়ের মা‘বূদ রয়েছে। তোমরাও তো সেরূপ কথা বলছো। সেই মহান সত্তার কসম, যার হাতে আমার প্রাণ! নিশ্চয় তোমরা ঐ সমস্ত লোকদের পথ অনুসরণ করে চলবে, যারা তোমাদের পূর্বে অতীত হয়ে গেছে’ (তিরমিযী, হা/২১৮০; মিশকাত, হা/৫৪০৮)। অত্র হাদীছ প্রমাণ করে যে, কোন নির্ধারিত দিনের মাধ্যমে কল্যাণ কামনা করা বা কোন কিছু মনে করে সে দিন পালন করা শিরক। তবে যদি দিবস পালনের পিছনে কোন কল্যাণ, মঙ্গল ও শুভ কিছু হওয়ার নিয়্যাত না থাকে এবং দিবসকে সম্মান করার বিষয়ও না থাকে এমনিতেই স্বাভাবিকভাবে দিবস পালন করে তাহলে সেটি শিরক না হলেও হারাম হবে। রাসূল (ছাঃ) যখন মক্কা থেকে মদীনায় আসলেন, তখন দেখলেন মক্কার লোকেরা দু’টি দিনে খেলাধুলা করে। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, ‘এ দু’টি দিন কী? তারা বলল, আমরা জাহিলিয়্যাতের যুগ থেকেই এ দু’টি দিন পালন করে আসছি। তখন রাসূল (ছাঃ) সে দু’টি দিনকে বাতিল করে মুসলিমদের জন্য দু’টি দিন নির্ধারণ করলেন তাদের খেলাধুলা, আনন্দ ও যিকিরের জন্য। তার একটি হল, ঈদুল ফিতর আর অন্যটি ঈদুল আযহা (আবু দাঊদ, হা/১১৩৪; মিশকাত, হা/১৪৩৯)। অত্র হাদীছ প্রমাণ করে মুসলিমদের জন্য এ দু’টি দিন ছাড়া আর কোন দিন পালনীয় হতে পারে না। আর কোন দিন পালনীয় হলে তা রাসূল (ছাঃ) বলতেন, তোমাদের দু’দিন আর আমার পক্ষ থেকে দু’দিন। কিন্তু তিনি তা না করে মদিনাবাসীর দুই দিনকে বাতিল করে নতুন দুটি দিন দিয়েছেন। যার মাধ্যমে অন্য কোন দিবস পালনের সুযোগ আর ইসলামে নাই।

(ফাতওয়া বোর্ড আল-জামি'আহ আস-সালাফিয়্যাহ।)

📕উৎসঃ মাসিক আল ইতিছাম, ফেব্রুয়ারি ,২০২৩।

২ নং প্রশ্ন এবং উত্তর

প্রশ্ন স্বাধীনতা ও বিজয় দিবস পালনের ব্যাপারে ইসলাম কী বলে? কোন পদ্ধতিতে আমাদের এ সব দিবস পালন করা উচিত? এ সম্পর্কে কুরআন ও হাদিসে আলোক জানতে চাই।

উত্তর:

ইসলামের দৃষ্টিতে কিভাবে বিজয় পালন করতে হয় তা জানতে সূরা নাসর এর তরজমা পড়ুন। আল্লাহ তাআলা বলেন,

إِذَا جَاءَ نَصْرُ اللَّـهِ وَالْفَتْحُ - وَرَأَيْتَ النَّاسَ يَدْخُلُونَ فِي دِينِ اللَّـهِ أَفْوَاجًا - فَسَبِّحْ بِحَمْدِ رَبِّكَ وَاسْتَغْفِرْهُ ۚ إِنَّهُ كَانَ تَوَّابًا

“যখন আসবে আল্লাহর সাহায্য ও বিজয় এবং আপনি মানুষকে দলে দলে আল্লাহর দ্বীনে প্রবেশ করতে দেখবেন তখন আপনি তাসবীহ পাঠ তথা আপনার পালনকর্তার পবিত্রতা বর্ণনা করুন এবং ইস্তিগফার তথা তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করুন। নিশ্চয় তিনি ক্ষমাকারী।” (সূরা নাসর)

অর্থাৎ বিজয় অর্জিত হলে মনে করতে হবে, এই বিজয় আল্লাহ তাআলার সাহায্যেই সম্ভব হয়েছে। তাঁর সাহায্য ও শক্তি ছাড়া কখনোই তা সম্ভব ছিল না। তাই বেশি বেশি মহান রবের তাসবিহ ও ইস্তিগফার পাঠ করতে হবে এবং তাঁর দরবারে কৃতজ্ঞতা আদায় করতে হবে। কিন্তু তা কেবল বিজয়ের দিনেই সীমাবদ্ধ নয় বরং তা সবসময়-সারা বছর।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং সাহাবীদের যুগে কত শত দেশ ও শহর বিজিত হয়েছে কিন্তু তারা কি কখনো ঘটা করে ‘বিজয় দিবস’ পালন করেছেন-এমন কোন ইতিহাস আমাদের জানা নেই।

◈ বর্তমান যুগে আমাদের দেশে বিজয় দিবস পালনের নামে কী হয়?

কারও অজানা নয় যে, বর্তমানে বিজয় কিংবা স্বাধীনতা দিবস পালনের নামে অনুষ্ঠিত হয় বাদ্য ও নাচগানের অনুষ্ঠান, যুবক-যুবতীদের নিয়ে উত্তাল কনসার্ট, নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা এবং নানা ধরণের অপসংস্কৃতি চর্চা। কথিত ‘শহীদদের’ উদ্দেশ্যে তৈরি করা বেদিতে ফুল দেয়া হয়, সেনাবাহিনী সেগুলোতে স্যালুট দেয়, রাজনৈতিক বক্তারা পুরাতন হিংসা-বিদ্বেষকে উস্কে দেয়, পরাজিত গোষ্ঠীকে উদ্দেশ্য করে জঘন্য ভাষায় গালাগালি করে ও আক্রমণাত্মক ভাষায় বক্তৃতা দেয়। কিন্তু বিজয়ীদের জন্য এগুলো কখনও শোভা পায়? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মক্কা বিজয় কি এর উৎকৃষ্ট উদাহরণ হতে পারে না?

◈ বিজয় ও স্বাধীনতা অর্জন উপলক্ষে আমাদের করণীয় কি?

রাষ্ট্রের বিজয় উপলক্ষে আমাদের কর্তব্য, আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করা এবং অধিক পরিমাণে তাসবীহ ও ইস্তিগফার পাঠ করা। কারণ এ বিজয় নিজেদের শক্তি-সামর্থ্য বলে নয় বরং আল্লাহর পক্ষ থেকে বিশেষ সাহায্যেই সম্ভব হয়েছে। সর্বোপরি সব ধরণের অপসংস্কৃতি ও শিরকি কার্যক্রম, হিংসা-বিদ্বেষ ও উস্কানি মূলক বক্তব্য ও আচরণ পরিহার করে ক্ষমা, উদারতা এবং ন্যায়-ইনসাফ এর ভিত্তিতে সকলে মিলেমিশে দেশের উন্নয়ন ও মানুষের কল্যাণে কাজ করতে হবে, অশিক্ষা ও দরিদ্রতা দূরীকরণে অবদান রাখতে হবে এবং শত্রুর কবল থেকে দেশ রক্ষার জন্য একতাবদ্ধ থাকতে হবে... তবেই মানুষ প্রকৃত স্বাধীনতার ফল লাভ করতে সক্ষম হবে ইনশাআল্লাহ।

আরও মনে রাখতে হবে, যে দেশে আমরা জন্ম গ্রহণ করেছি এবং যে দেশের আলো ও বাতাসে আমরা বড় হয়েছি তার প্রতি আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে। সে দেশের মাটি ও মানুষকে ভালবাসতে হবে এবং এমন কোন কাজ করা যাবে না যাতে দেশের বা দেশের মানুষের কোন ক্ষতি হয় অথবা বহিঃর্বিশ্বে বদনাম হয়।

মোটকথা, একজন খাঁটি মুসলিম হবে খাঁটি দেশপ্রেমিক, সৎ ও আদর্শবান নাগরিক এবং দেশ ও জাতির অতন্দ্র প্রহরী-তবে তা অবশ্যই ইসলামের মহান আদর্শকে বুকে ধারণ করে; ইসলামকে জলাঞ্জলি দিয়ে নয়।

আল্লাহু আলাম।

উত্তর প্রদানে:

আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল

[লিসান্স, মদিনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়]

দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদি আরব

Post a Comment

Previous Post Next Post