বাংলাদেশের সবচেয়ে সুন্দর এই জায়গা আসার এবং থাকার সুযোগ শুধুমাত্র এখন ২ মাস এবং প্রতিদিন ২০০০ মানুষ এখানে আসতে পারে । তাই এখানে আসার জন্য সর্বনিন্ম ১৫ দিন আগে থেকেই প্ল্যান করে নেওয়া ভালো । তাহলে সবকিছু ছুটির দিনের সাথে পছন্দমত বাস , শিপ , রিসোর্ট পাওয়ার একটা ভালো সম্ভবনা থাকে ।
বাসঃ
যে বাস গুলো শিপ শিডিউল মেইনটেইন করে সেগুলো নেওয়ার চেষ্টা করবেন। এর ভিতর imperial, saintmartin paribhan অন্যতম । এসি বাসের ভাড়া পড়বে ১৩০০ থেকে শুরু করে ২০০০ টাকা। অনলাইনে টিকিট কাটতে পাড়বেন bdtickets,shohoj সাইট থেকে কিন্তু এখানে ডিস্কাউন্ট পাবেন না। কাউন্টারে গিয়ে কাটলে ২০০-৩০০ টাকা কমে টিকিট পাওয়া যায় ।
সময় লাগে ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা । সেই হিসেবে ফ্ল্যাট স্লিপার সিট নিতে পারেন । সামনের দিকে এবং low deck নিবেন । ঝাঁকুনি কম হবে । যাদের স্লিপারে সমস্যা হয় তাঁরা business class অথবা economy class seat নিতে পারেন ।বসে ঘুমানো যায় না , তাই একটু কষ্টকর হতে পারে ।
বাস নামিয়ে দিবে ৪.৩০ থেকে ৫.৩০ টার ভিতর । সেই হিসেবে imperial express নেওয়া ভালো হবে , এদের নিজস্ব কাউন্টার আছে । Washroom এবং waiting room আছে । বাকিদের নেই , না থাকলেও সমস্যা নেই , এখানে ভাড়াতে রেস্ট রুম , washroom পাওয়া যায় ।
শিপঃ
আপাতত চলছে ৫ টি শিপ। যেতে সময় লাগবে ৬-৭ ঘণ্টা ।এর ভিতর কর্নফুলি ক্রুজ এবং বারো আউলিয়া ভালো শিপ । সুন্দর দেখতে এমন শিপ হলে কর্নফুলি ক্রুজ নিবেন আর সবার আগে যেতে চাইলে বে ক্রুজ নিতে পারেন । টিকেট ৩৫০০ টাকা থেকে শুরু কিন্তু এগুলো পাবেন না সব বুকড ।৪৫০০ টাকার উপরের সিট গুলো ভালো হবে । Gladious,lilac lounge, business class এগুলো ভালো হবে । ওপেন ডেক ভুলেও নিয়েন না । ৬-৭ ঘণ্টা খোলা পরিবেশে বসে থাকা কষ্টের বিশেষ করে দুপুরে রোদ এবং সন্ধ্যার ঠাণ্ডা বাতাস সব গায়ে লাগবে । বাচ্চা সাথে থাকলে বেশি কষ্ট হবে ।
শিপে খাবারে দাম দিগুণ ।মানও ভালো না । তাই উঠার আগে হালকা খাবার সাথে নিয়ে আসা উত্তম হবে ।
https://bdtickets.com/অথবা https://gozayaan.com/থেকে টিকেট কিনে নিতে পারেন । Gozayaan থেকে নিলে কিছু ডিস্কাউন্ট পাওয়া যায় ।
রিসোর্টঃ
প্রচুর থাকার জায়গা আছে , চিন্তার কিছু নেই । তবে ভালো রিসোর্ট পেতে চাইলে ১৫-২০ দিন আগেই বুক করতে হবে । আর সি ভিউ রুম চাইলে ২০-২৫ দিন আগে থেকেই বুকিং দিতে হবে । রুম ভাড়া সি ভিউ হলে ৯০০০ থেকে ২২০০০ টাকা পর্যন্ত আছে । ভালো সুন্দর ,নিরিবিল পরিবেশ চাইলে পশ্চিম বীচ থাকবেন । আর এখন যা খরচ , সেন্টমার্টিনের আসল ফিল পেতে চাইলে অবশ্যই পশ্চিম বীচে থাকতে হবে । জাহাজ ঘাটের আস পাশ খুবই কোলাহলপূর্ন থাকে । রিসোর্ট গুলো একসাথে লাগানো থাকে । সারাদিন মানুষে মুখরিত থাকে । তবে এইদিকে খাবারের দাম কম কিছুটা । যত উন্নত রিসোর্ট তত বেশি খাবারের দাম ।
পশ্চিম বীচের ভালো রিসোর্টের ভিতর - Bela vista, luipaz, sand castle,sailor eco resort, সুর্যস্নান ইত্যাদি।এর ভিতর sailor eco resort খাবারের মান ভালো না , দাম অনেক বেশি রাখে ।১০০ টাকার চিকেন এখানে স্থানীয় মুরগি বলে ৬০০ টাকা রেখে দিবে ।কিন্তু এদের সি ভিউ রুম গুলো সুন্দর । আর দখিন হাওয়া রিসোর্ট এর ব্যবহার ভালো না ।বিশেষ করে সাইকেল রাইডার হলে এদের এড়িয়ে চলবেন ।
দ্বীপে ঘোরাঘুরি ও খাবারঃ
ছেঁড়াদ্বীপ যেতে চাইলে ফজরে রওয়ানা দিবেন , ৭.৩০ টার পরে কিন্তু প্রবেশ করতে দেয় না ।এছাড়া পশ্চিম বিচ সুন্দর দুপুরে গোসল এবং বিকেলে হাঁটার জন্য । দ্বীপে সব কিছুর দাম বেশি , সবাই শুধু কোপ দেওয়ার ধান্ধায় থাকে । ১০০ টাকার অটো ভাড়া চাইবে ৫০০ টাকা , কিন্তু আপনি সঠিক দাম জানলে ঠিকই ১০০ টাকায় নিয়ে যাবে । কিছু জায়গা সিণ্ডিকেটের মত । যেমন ডাবের দাম । সবখানে প্রায়ই একই । খাবার খাওয়ার আগে দাম জেনে নিবেন । বাজারে অতিরিক্ত দাম রাখে । রিসোর্ট গুলোর ভিতর নোঙর রিসোর্টের খাবার প্যাকেজ পাওয়া যায় ১৪৫০ টাকায় যা আমার কাছে অন্যদের তুলনা মন্দের ভালো লেগেছে ,অন্যরা দাম কম রাখে আবার পরিমাণ ও কম দেয় ।অনেকে শুধু দাম দেখে বসে যায় , পরে আফসোস হয় । এছাড়া Bela vista রিসোর্টের খাবার মান ভালো । রিসোর্টে খেলে খাবার সকালেই অর্ডার দিতে হবে ।
সাইকেল ভাড়া পাওয়া যায় ঘণ্টা প্রতি ৫০ টাকা ,বাইক ৫০০ টাকা । বেশি সময়ের জন্য নিলে আরও কমে পাবেন । দামাদামি করে নিবেন ।
খরচঃ
একটু ভালো ভাবে যাতায়াত, থাকা খাওয়া করতে গেলে জন প্রতি ২০০০০ টাকা লাগবে । এর থেকে কমেও করা যাবে এটা আপনার উপর নির্ভর করে । সর্বনিন্ম ৯০০০ টাকার কম সম্ভব না , যদিও এই অল্প বাজেটে আপনাকে কিছুটা কষ্টকরতে হবে । আমার সাজেশন থাকবে ১৫০০০ এর উপর বাজেট থাকলে সেন্টমার্টিন যাওয়ার ।
সর্বোপরি আসা যাওয়াতে প্রায় ৩০-৪০ ঘণ্টা সময় লেগে যায় । তারপরেও যাওয়ার পর এত সুন্দর পরিবেশ আপনার মন ভালো করে দিবে। হাতে কমপক্ষে ৩ দিন থাকার সময় নিয়ে যাবেন তাহলে ভালো ভাবে উপভোগ করতে পাবেন । দ্বীপের মানুষ খুবই কষ্টে জীবন চালায় , কুকুর গুলো দেখলেই বুঝতে পারবেন এখানে কীভাবে নীরব দুর্ভিক্ষ চলছে । কুকুর গুলোকে নিজের বেঁচে যাওয়া খাবার গুলো দিয়েন । এদের দিকে তাকানো যায় না , হাড় বের হয়ে গেছে । খুবই কষ্ট লাগে । যাই হোক আপনার যাত্রা শুভ হোক । আর এটা আমার অভিজ্ঞতা থেকে লেখা সবার সাথে মিলবে না । তাই ভুল ত্রুটি মার্জনীয় ।