গিজার ব্যবহারের নিরাপদ ও কার্যকরী টিপস: একটি সম্পূর্ণ গাইড

গিজার ব্যবহারের নিরাপদ ও কার্যকরী টিপস: একটি সম্পূর্ণ গাইড

শীত আসছে বলে গিজারের ব্যবহার বেড়ে যাবে স্বাভাবিকভাবেই। গিজার আমাদের দিনের পর দিন গরম পানির চাহিদা মেটায়, কিন্তু সঠিক ব্যবহার ও রক্ষণাবেক্ষণ না জানলে এটি বিপদের কারণও হয়ে দাঁড়াতে পারে।

এখানে গিজার নিয়ে একটি সম্পূর্ণ তথ্যবহুল, উপকারী এবং পরামর্শমূলক গাইড দেওয়া হলো:

শীতের আগে গিজার: একটি সম্পূর্ণ গাইড

গিজার আমাদের ঘরের একটি অত্যাবশ্যকীয় কিন্তু প্রায়ই উপেক্ষিত যন্ত্র। শীত এলে এর গুরুত্ব বেড়ে যায় বহুগুণ। আসুন জেনে নিই গিজার সম্পর্কে প্রয়োজনীয় সব তথ্য।

গিজার কী এবং কীভাবে কাজ করে?

গিজার মূলত একটি এমন যন্ত্র যা পানি গরম করে এবং নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করে। এতে সাধারণত একটি গরম করার উপাদান (হিটিং এলিমেন্ট) বা একটি বার্নার (গ্যাসের ক্ষেত্রে) থাকে যা ট্যাঙ্কের পানি গরম করে। একটি থার্মোস্টাট পানি নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় পৌঁছালে তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ হয়ে যায়।

গিজার কেন গুরুত্বপূর্ণ? 

(উপকারিতা)

১. সুবিধা: যখনই প্রয়োজন, গরম পানি হাতের নাগালে।

২.শীতের অপরিহার্যতা: শীতকালে গোসল, রান্না, কাপড় ধোয়া—সবক্ষেত্রেই গরম পানির প্রয়োজন হয়।

৩.স্বাস্থ্যসম্মত: ঠাণ্ডা পানির তুলনায় গরম পানি জীবাণু ধ্বংসে বেশি কার্যকর।

৪.শক্তি দক্ষতা (আধুনিক মডেল): নতুন মডেলের গিজারগুলো কম শক্তিতে বেশি পানি গরম করতে পারে।

গিজার নির্বাচনের সময় কোন বিষয়গুলো দেখবেন? 

নতুন গিজার কিনতে গেলে এই বিষয়গুলো মাথায় রাখুন:

১. ধরন:

· স্টোরেজ/ট্যাঙ্ক টাইপ: একটি ট্যাঙ্কে পানি জমা করে গরম করে। পরিবারের সদস্য সংখ্যা অনুযায়ী ট্যাঙ্কের ক্যাপাসিটি (৬-২৫ লিটার) বেছে নিন।

· ইন্সট্যান্ট/ট্যাঙ্কলেস: পানির প্রয়োজন অনুযায়ী তাৎক্ষণিকভাবে গরম করে। কম জায়গা নেয় এবং অনবরত গরম পানি দেয়। তবে এর বিদ্যুৎ খরচ বেশি হতে পারে।

২. জ্বালানির ধরন:

· ইলেকট্রিক: বসতবাড়ির জন্য সবচেয়ে সাধারণ। স্থাপন করা সহজ।

· গ্যাস: দীর্ঘমেয়াদে অপেক্ষাকৃত সস্তা। তবে গ্যাস লাইনের সংযোগ ও ভালো ভেন্টিলেশন প্রয়োজন।

· সোলার/সৌর: সবচেয়ে কম operating cost, কিন্তু প্রাথমিক বিনিয়োগ বেশি।

৩. ক্যাপাসিটি: 

আপনার পরিবারের চাহিদা অনুযায়ী ট্যাঙ্ক সিলেক্ট করুন।

· ১-২ জন: ৬-১০ লিটার

· ৩-৪ জন: ১৫-২৫ লিটার

· ৫+ জন: ২৫+ লিটার

৪. এনার্জি এফিসিয়েন্সি: 

৫-স্টার রেটেড গিজার কেনার চেষ্টা করুন। এটি দীর্ঘমেয়াদে আপনার বিদ্যুৎ বিল অনেকটা কম করবে।

৫. ব্র্যান্ড ও ওয়ারেন্টি: 

নির্ভরযোগ্য ব্র্যান্ড কিনুন এবং ওয়ারেন্টির সময়কাল ও শর্তাদি ভালো করে পড়ে নিন।

গিজার ব্যবহারের নিরাপদ ও কার্যকরী টিপস (পরামর্শ)

১. তাপমাত্রা সেটিং: 

থার্মোস্টাট ৫০-৬০°C (১২২-১৪০°F) এর মধ্যে সেট করুন। বেশি তাপমাত্রা স্কেল্ডিং (পুড়ে যাওয়া) এর risk বাড়ায় এবং বিদ্যুৎ/গ্যাসের অপচয় হয়।

২. নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ: 

গিজার চালু অবস্থায় কখনও খালি করবেন না। এতে হিটিং এলিমেন্ট পুড়ে যেতে পারে।

৩. সেফটি ভাল্ভ: 

নিয়মিত চেক করুন যে প্রেশার রিলিফ ভাল্ভ ঠিকভাবে কাজ করছে কিনা। এটি ট্যাঙ্কের ভেতরে চাপ বেড়ে গেলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে পানি বের করে দেয় এবং বিস্ফোরণ রোধ করে।

৪. শিশুদের থেকে দূরে রাখুন: 

গিজার এবং এর সুইচ শিশুদের নাগালের বাইরে রাখুন। গরম পানির ট্যাপ থেকেও তারা পুড়ে যেতে পারে।

৫. গ্যাস গিজারের ক্ষেত্রে: 

গ্যাস লিকেজ আছে কিনা নিয়মিত চেক করুন এবং রুমে পর্যাপ্ত বায়ু চলাচলের ব্যবস্থা রাখুন। কার্বন মনোক্সাইড বিষাক্ত গ্যাস তৈরি হতে পারে।

গিজারের রক্ষণাবেক্ষণ (মেইনটেনেন্স টিপস)

সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ গিজারের আয়ু বৃদ্ধি করে এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করে।

১. এনোড রড চেক: 

ম্যাগনেশিয়াম এনোড রড গিজারকে জারা  হওয়া থেকে রক্ষা করে। বছরে অন্তত একবার একজন  টেকনিশিয়ান দিয়ে এটি পরীক্ষা করিয়ে নিন। সাধারণত ৩-৫ বছর পর এনোড রড পরিবর্তন করার প্রয়োজন হয়।

২. ট্যাঙ্ক ফ্লাশ করা: 

বছরে একবার গিজারের ট্যাঙ্ক থেকে জমে থাকা ময়লা, sediments (বালি, লোহা) বের করে দিন। এটি গিজারের efficiency বাড়ায় এবং আয়ু বাড়ায়।

৩. বিদ্যুৎ সংযোগ চেক: 

ইলেকট্রিক গিজারের তার ও প্লাগ নিয়মিত চেক করুন যাতে কোনো প্রকার ফ্রে বা ক্ষয় না থাকে।

৪. পানির লিকেজ: 

গিজার বা পাইপ লাইনে কোনো লিকেজ দেখলে সাথে সাথে মেরামতের ব্যবস্থা নিন।

সতর্কতা ও সমস্যা সমাধান

সমস্যা সম্ভাব্য কারণ ও সমাধান

পানি গরম হচ্ছে না 

- বিদ্যুৎ/গ্যাস সংযোগ চেক করুন। 

- ফিউজ/সার্কিট ব্রেকার চেক করুন। 

- থার্মোস্টাট নষ্ট হয়ে গেছে (টেকনিশিয়ান ডাকুন)।

গরম পানির সাথে অস্বাভাবিক গন্ধ

- ট্যাঙ্কে ব্যাকটেরিয়া জন্মানো। 

- ট্যাঙ্ক ফ্লাশ করে পরিষ্কার করুন।

পানি লিক হচ্ছে 

- ভাল্ভ নষ্ট হয়েছে বা ট্যাঙ্কে ফুটো হয়েছে। 

- জরুরি ভিত্তিতে মেরামত করুন।

গিজার থেকে আওয়াজ আসছে 

- ট্যাঙ্কের নিচে sediments জমেছে। 

- ফ্লাশ করার প্রয়োজন।

পানি বেশি গরম হচ্ছে 

- থার্মোস্টাট সেটিং চেক করুন এবং তাপমাত্রা কমিয়ে নিন।

শেষ কথাঃ

গিজার আমাদের জীবনযাপনকে সহজ করলেও একে অবহেলা করলে মাত্রা ছাড়িয়ে যেতে পারে। তাই শীত আসার আগেই আপনার গিজারটি একজন টেকনিশিয়ান দ্বারা সার্ভিসিং করিয়ে নিন। একটি ছোটো খরচ আজ, ভবিষ্যতের বড় কোনো দুর্ঘটনা ও খরচ থেকে আপনাকে রক্ষা করবে।

সাবধান থাকুন, নিরাপদ থাকুন এবং শীতের সন্ধ্যায় আরামদায়ক গরম পানির সুবিধা উপভোগ করুন।

إرسال تعليق

أحدث أقدم