গবেষণার মূল চালিকাশক্তি হলো নতুনত্ব। একটি গবেষণা কেবল তখনই মূল্যবান হয়, যখন তা পূর্ববর্তী জ্ঞানভাণ্ডারের সীমাবদ্ধতা অতিক্রম করে নতুন কিছু যোগ করে। এই সীমাবদ্ধতা বা অনুপস্থিত জ্ঞানকেই আমরা বলি গবেষণা গ্যাপ (Research Gap)।
১. Research Gap কি?
Research Gap হলো সেই শূন্যতা বা ঘাটতি, যা পূর্ববর্তী গবেষণায় যথাযথভাবে আলোচিত হয়নি বা একেবারেই অনাবিষ্কৃত রয়ে গেছে। এটি হতে পারে কোনো নতুন প্রশ্ন, সমাধানহীন সমস্যা, নতুন প্রেক্ষাপট, বা বিদ্যমান গবেষণার সীমাবদ্ধতা থেকে উদ্ভূত নতুন অনুসন্ধানের সুযোগ।
২. কিভাবে Research Gap খুঁজে বের করতে হয়?
- গবেষণা গ্যাপ খুঁজে বের করা একটি ধাপে ধাপে বিশ্লেষণাত্মক প্রক্রিয়া। গবেষকের সমালোচনামূলক দৃষ্টিভঙ্গি এখানে অত্যন্ত জরুরি।
- পূর্ববর্তী গবেষণা নিবিড়ভাবে পর্যালোচনা করা
- একই বিষয়ের উপর ভিন্ন প্রেক্ষাপট বা অঞ্চলে গবেষণা হয়েছে কিনা দেখা
- নতুন প্রযুক্তি, সামাজিক পরিবর্তন বা নীতিগত হালনাগাদে গবেষণার নতুন ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে কিনা বিশ্লেষণ করা।
- গবেষণায় ব্যবহৃত পদ্ধতিগত সীমাবদ্ধতা (Methodological Limitations) চিহ্নিত করা।
- বিরোধপূর্ণ ফলাফল (Contradictory Findings) খুঁজে দেখা।
৩. কোন কোন মাধ্যমে থেকে আমরা Research Gap খুঁজে বের করতে পারি ?
গবেষণা গ্যাপ খোঁজার জন্য বহুমাত্রিক উৎস ব্যবহার করা যায়। কিছু প্রধান উৎস হলো:
- গবেষণা পেপার (Peer-reviewed articles)।
- বই ও একাডেমিক টেক্সটবুক।
- জার্নাল ও কনফারেন্স প্রোসিডিংস।
- গবেষণা ডাটাবেস (যেমন Google Scholar, Scopus, Web of Science)।
- পত্রিকা ও ম্যাগাজিন (সমসাময়িক বিষয়বস্তু বিশ্লেষণ)
- ইন্টারনেট ও রিপোর্টস (NGO, গবেষণা সংস্থা, সরকারি রিপোর্ট)।
- PhD থিসিস বা মাস্টার্স ডিসার্টেশন।
- সার্ভে ও সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে প্রাপ্ত প্রাথমিক তথ্য
৪. Research Gap সঠিকভাবে সিলেক্ট হয়েছে কিনা তা কিভাবে যাচাই করব?
প্রাসঙ্গিকতা (Relevance): নির্বাচিত গ্যাপ বর্তমান জ্ঞানচর্চার সাথে কতটা প্রাসঙ্গিক?
নতুনত্ব (Novelty): বিষয়টি পূর্বে যথেষ্টভাবে আলোচিত হয়নি কিনা তা নিশ্চিত করা।
কার্যকরিতা (Feasibility): নির্বাচিত গ্যাপ নিয়ে গবেষণা করা বাস্তবসম্মত ও সম্ভব কিনা।
অবদান (Contribution): গবেষণা শেষে ক্ষেত্রটিতে নতুন জ্ঞান, নীতি, প্রযুক্তি বা প্রয়োগ যোগ হবে কিনা।
প্রমাণ (Evidence): পূর্ববর্তী গবেষণার রেফারেন্স ও উদ্ধৃতি দিয়ে দেখানো, কেন এটি একটি সঠিক ও যৌক্তিক গ্যাপ।
৫. Research Gap নিয়ে অতিরিক্ত কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক:
- একটি Research Gap একক নাও হতে পারে, বরং একাধিক ক্ষুদ্র গ্যাপ মিলিয়ে বড় প্রশ্ন তৈরি হতে পারে।
- আন্তঃবিষয়ক গবেষণা (Interdisciplinary Research) প্রায়ই নতুন গ্যাপ উন্মোচন করে।
- কখনও কখনও গ্যাপ সৃষ্টি হয় সমাজ, প্রযুক্তি বা পরিবেশগত পরিবর্তনের কারণে।
- গবেষণা গ্যাপ সনাক্তকরণে Critical Thinking এবং Systematic Literature Review অপরিহার্য।
সঠিকভাবে নির্বাচিত একটি Research Gap কেবল নতুন জ্ঞান তৈরিই করে না, বরং ভবিষ্যৎ গবেষণার দিকনির্দেশক হয়ে দাঁড়ায়।