ইউরিক অ্যাসিড – নিঃশব্দে শরীরে জমে ওঠা এক শত্রু!

ইউরিক অ্যাসিড – নিঃশব্দে শরীরে জমে ওঠা এক শত্রু!

সমস্যাকে ছোট করে দেখবেন না, আজ জানুন কারণ, ক্ষতি, প্রতিকার আর সঠিক খাদ্যাভ্যাস। সুস্থ জীবন আপনার হাতে।”

ইউরিক অ্যাসিড বেড়ে গেলে কি হয়?

ইউরিক অ্যাসিড হলো আমাদের শরীরে পিউরিন নামক এক ধরনের রাসায়নিক পদার্থ ভাঙার ফলে তৈরি হওয়া প্রাকৃতিক বর্জ্য পদার্থ। সাধারণত কিডনি ইউরিক অ্যাসিড শরীর থেকে বের করে দেয়। কিন্তু শরীরে এর মাত্রা বেড়ে গেলে (Hyperuricemia) নানা ধরনের সমস্যা দেখা দেয়।

গাউট (Gout):

ইউরিক অ্যাসিড বেশি হলে জয়েন্ট বা গাঁটে স্ফটিক আকারে জমে গিয়ে তীব্র ব্যথা, ফোলা ও লালচে হয়ে যায়। বিশেষত পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুলিতে এ সমস্যা বেশি হয়।

কিডনির ক্ষতি:

অতিরিক্ত ইউরিক অ্যাসিড কিডনিতে পাথর (Kidney Stone) তৈরি করতে পারে। এতে প্রস্রাবে জ্বালা, ব্যথা, রক্ত আসা এমনকি কিডনির কার্যকারিতা নষ্ট হয়ে যেতে পারে।

শরীরের ক্লান্তি ও ব্যথা:

শরীর সবসময় ভারী লাগে, মাংসপেশি ও হাড়ে অস্বস্তি ও ব্যথা হয়।

উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদরোগের ঝুঁকি:

গবেষণায় দেখা গেছে, ইউরিক অ্যাসিড বেড়ে গেলে উচ্চ রক্তচাপ ও কার্ডিওভাসকুলার রোগের ঝুঁকি বাড়ে।

মেটাবলিক সিনড্রোম:

ইউরিক অ্যাসিডের উচ্চ মাত্রা ডায়াবেটিস, স্থূলতা, কোলেস্টেরল সমস্যা ইত্যাদির সাথে সম্পর্কিত।

ইউরিক অ্যাসিড বেড়ে যাওয়ার কারণ

✔ অতিরিক্ত লাল মাংস, কলিজা, মাছের ডিম, সার্ডিন, অ্যাঙ্কোভি, সি-ফুড জাতীয় খাবার খাওয়া।

✔ বেশি ভাজাপোড়া ও ফাস্টফুড খাওয়ার অভ্যাস।

✔ অ্যালকোহল ও চিনি মেশানো পানীয় (Soft Drinks, Energy Drinks)।

✔ স্থূলতা বা অতিরিক্ত ওজন।

✔ কিডনির দুর্বলতা বা কম কার্যকারিতা।

✔ বংশগত কারণ।

✔ দীর্ঘমেয়াদে কিছু ওষুধ যেমন ডায়ুরেটিক (মূত্রবর্ধক) ওষুধ।

ইউরিক অ্যাসিডের বৃদ্ধি কিভাবে রোধ করা যায়?

খাদ্যাভ্যাস নিয়ন্ত্রণ করুন:

পিউরিন সমৃদ্ধ খাবার (লাল মাংস, কলিজা, সি-ফুড) কম খান।

বেশি করে শাকসবজি, ফলমূল ও আঁশযুক্ত খাবার খান।

পরিশোধিত চিনি ও ফাস্টফুড এড়িয়ে চলুন।

প্রচুর পানি পান করুন:

প্রতিদিন অন্তত ৮-১০ গ্লাস পানি খান।

পানি কিডনিকে ইউরিক অ্যাসিড বের করতে সহায়তা করে।

ওজন নিয়ন্ত্রণ করুন:

স্থূলতা ইউরিক অ্যাসিডের ঝুঁকি অনেক বাড়ায়।

নিয়মিত ব্যায়াম করুন।

অ্যালকোহল ও মিষ্টি পানীয় এড়িয়ে চলুন:

বিয়ার, ওয়াইন ও সোডা জাতীয় পানীয় ইউরিক অ্যাসিড বাড়ায়।

সঠিক ওষুধ সেবন করুন:

চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনো ওষুধ খাবেন না।

প্রয়োজনে ডাক্তার ইউরিক অ্যাসিড কমানোর ওষুধ দিতে পারেন।

ইউরিক অ্যাসিড বেড়ে গেলে কী খেলে উপকার হয়?

✅ ফলমূল: আপেল, চেরি, স্ট্রবেরি, ব্লুবেরি, কলা, আঙুর।

✅ সবজি: শসা, লাউ, করলা, ঢেঁড়স, মুলা, গাজর, ফুলকপি, ব্রকলি।

✅ ডাল ও শস্য: অল্প পরিমাণে মসুর ডাল, ওটস, ব্রাউন রাইস।

✅ দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার: লো-ফ্যাট দুধ, দই।

✅ বাদাম ও বীজ: আমন্ড, আখরোট, চিয়া সিড, ফ্ল্যাক্স সিড।

✅ পানি ও তরল: লেবুর পানি, নারকেল পানি।

যেসব খাবার এড়িয়ে চলবেন

❌ লাল মাংস (গরু, খাসি, ভেড়া)।

❌ কলিজা, ভুঁড়ি, মগজ জাতীয় খাবার।

❌ সি-ফুড (সার্ডিন, অ্যাঙ্কোভি, চিংড়ি, মাছের ডিম)।

❌ অতিরিক্ত ডাল ও মটরশুঁটি।

❌ অ্যালকোহল।

❌ চিনি মেশানো পানীয়।

জীবনধারায় করণীয়

🔹 নিয়মিত হাঁটাহাঁটি ও হালকা ব্যায়াম করুন।

🔹 রাত জাগা এড়িয়ে চলুন।

🔹 স্ট্রেস কমান।

🔹 সঠিক রুটিনে খাবার খান।

🔹 নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করুন।

ইউরিক অ্যাসিড বেড়ে যাওয়া অবহেলার বিষয় নয়। এটি গাউট, কিডনি স্টোনসহ নানা জটিল রোগের ঝুঁকি তৈরি করে। তাই খাবারে নিয়ন্ত্রণ, পর্যাপ্ত পানি, নিয়মিত ব্যায়াম এবং চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চললে ইউরিক অ্যাসিড নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।

إرسال تعليق

أحدث أقدم