ব্যাংক লোন কখন ‘খেলাপী ঋণ’ হয়? জেনে নিন SS, DF, BL এবং NPL-এর সহজ হিসাব

ব্যাংক লোন কখন খেলাপী বা classified হয়? SS, DF এবং BL লোন কী? NPL বা নন-পারফর্মিং লোন বলতে কী বোঝায়? বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী লোন শ্রেণিকরণের বিস্তারিত জানুন এই ব্লগে।

ব্যাংক লোন কখন ‘খেলাপী ঋণ’ হয়?

ব্যাংক থেকে লোন নেওয়া অনেকের জন্যই সাধারণ একটি বিষয়। কিন্তু আপনি কি জানেন, কিস্তি পরিশোধে ঠিক কতদিন দেরি হলে আপনার শখের লোনটি ব্যাংকের খাতায় "খেলাপী ঋণ" হিসেবে চিহ্নিত হয়? কিংবা ব্যাংকিং পরিভাষায় SS, DF, BL বা NPL বলতে আসলে কী বোঝায়?

আজকের ব্লগে আমরা একটি বাস্তব উদাহরণের মাধ্যমে ব্যাংকের ঋণ শ্রেণিকরণ (Loan Classification) এবং খেলাপী ঋণের (Default Loan) আদ্যপান্ত খুব সহজ ভাষায় আলোচনা করব।

একটি বাস্তব উদাহরণ: লোনের হিসাব-নিকাশ

ধরুন, আপনি কোনো একটি ব্যাংক থেকে ৫ লাখ টাকা লোন নিলেন। ব্যাংকের শর্ত অনুযায়ী, আপনার মাসিক কিস্তি ১৫,০০০ টাকা, যা প্রতি মাসের ৩০ তারিখে পরিশোধ করতে হবে।

সবকিছু ঠিকঠাক চলছিল, কিন্তু হঠাৎ কোনো কারণে আপনি ৩০ তারিখে কিস্তি জমা দিতে পারলেন না। সমস্যাটি এখান থেকেই শুরু। বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী, কিস্তি না দেওয়ার সময়কাল বাড়ার সাথে সাথে আপনার লোনটি বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ভাগ বা 'ক্লাসিফাইড' হতে থাকে।

লোন শ্রেণিকরণের ধাপসমূহ (Time-based Classification)

কিস্তি বকেয়া থাকার মেয়াদের ওপর ভিত্তি করে লোনকে তিনটি প্রধান ভাগে ভাগ করা হয়:

  1. Sub-Standard (SS) বা নিম্নমান: যখন কিস্তি বকেয়া থাকার সময় ৩ মাস অতিবাহিত হয়।
  2. Doubtful (DF) বা সন্দেহজনক: যখন কিস্তি বকেয়া থাকার সময় ৬ মাস অতিবাহিত হয়।
  3. Bad & Loss (BL) বা মন্দ ও ক্ষতিজনক: যখন কিস্তি বকেয়া থাকার সময় ১২ মাস বা ১ বছর অতিবাহিত হয়।

খেলাপী ঋণ (Default Loan) আসলে কোনটি?

অনেকেই মনে করেন, এক মাস কিস্তি না দিলেই বুঝি তিনি খেলাপী বা ডিফল্টার হয়ে গেলেন। বিষয়টি তা নয়।

ব্যাংক কোম্পানি আইন, ১৯৯১ এর ৫(গগ) ধারা অনুযায়ী, কিস্তি দিতে না পারার সময় ৬ মাস অতিবাহিত হলে (অর্থাৎ লোনটি যখন DF বা Doubtful স্টেজে পৌঁছায়), তখনই সেটি আইনত খেলাপী ঋণ হিসেবে গণ্য হয়।

এই পর্যায় থেকেই ওই গ্রাহক এবং ঋণের গ্যারান্টরদের আনুষ্ঠানিকভাবে ডিফল্টার (Defaulter) বলা হয়।

তাহলে শ্রেণিকৃত ঋণ বা Classified Loan কোনটি?

এখানে একটি সূক্ষ্ম পার্থক্য আছে। সব খেলাপী ঋণই শ্রেণিকৃত, কিন্তু সব শ্রেণিকৃত ঋণ খেলাপী নয়।

কিস্তি দিতে না পারার সময় ৩ মাস অতিবাহিত হলেই (অর্থাৎ লোনটি যখন SS হয়), তখন থেকেই সেটি Classified বা শ্রেণিকৃত ঋণ হয়ে যায়। সুতরাং, ব্যাংকিং ভাষায় SS, DF এবং BL—এই তিনটি অবস্থাই হলো ক্লাসিফাইড লোন।

NPL বা নন-পারফর্মিং লোন (Non-Performing Loan) কী? 

ব্যাংকিং এবং অর্থনীতির আলোচনায় NPL শব্দটি খুব শোনা যায়। সহজ কথায়, যে লোনের ইন্টারেস্ট বা সুদ ব্যাংকের আয়ের সাথে যোগ হয় না (অর্থাৎ লোনের কোনো 'পারফর্মেন্স' নেই), সেটিই NPL বা নন-পারফর্মিং লোন

হিসাবটা কেমন? যখন কোনো লোন SS (Sub-Standard) বা নিম্নমান হিসেবে চিহ্নিত হয় (৩ মাস বকেয়া), তখন থেকেই ব্যাংক ওই লোনের ওপর অর্জিত সুদকে আর তাদের 'আয়' (Income) হিসেবে দেখাতে পারে না। এই সুদ তখন আলাদা একটি হিসাবে (Interest Suspense Account) জমা রাখা হয়।

তাই সহজ কথায়: সকল ক্লাসিফাইড লোনই (SS, DF, BL) মূলত নন-পারফর্মিং লোন বা NPL।

বর্তমান পরিস্থিতি: আঁতকে ওঠার মতো তথ্য 

পত্রিকার তথ্য ও সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সেপ্টেম্বর ২০২৫ পর্যন্ত বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতে মোট খেলাপী ঋণের পরিমাণ প্রায় ৬.৫ লাখ কোটি টাকা! যা মোট বিতরণকৃত ঋণের ৩৫%-এর বেশি। এটি অর্থনীতির জন্য একটি বড় অশনিসংকেত।

ব্যাংকের এবং ঋণ গ্রহীতার শাস্তি কী? 

মানুষের আমানতের টাকায় ব্যাংক লোন দেয়। তাই এই বিশাল অংকের ঋণ যখন খেলাপী হয়ে যায়, তখন এর প্রভাব ব্যাংক এবং ঋণ গ্রহীতা উভয়ের ওপরই পড়ে।

  • ব্যাংক কি দেউলিয়া হতে পারে?
  • ঋণ গ্রহীতা কি জেলে যেতে পারেন?
  • গ্যারান্টরদের কি কোনো দায় আছে?

এই শাস্তি ও পরিণতি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে আগ্রহী? তাহলে নিচে কমেন্ট করে জানান। পাঠকদের আগ্রহ থাকলে পরবর্তী পর্বে আমরা "খেলাপী ঋণের শাস্তি ও প্রভাব" নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব। 🔥

(দ্রষ্টব্য: বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলার অনুযায়ী ঋণ শ্রেণিকরনের ২টি পদ্ধতি রয়েছে: Objective Criteria এবং Qualitative Judgement। ওপরের আলোচনাটি মূলত Objective Criteria-এর ভিত্তিতে এবং সাধারণ মানুষের বোঝার সুবিধার্থে সংক্ষিপ্তাকারে প্রস্তুত করা হয়েছে।)

লেখাটি ভালো লাগলে শেয়ার করতে ভুলবেন না!

SEO Keywords: Banking BD, Loan Classification, Default Loan Rule, NPL Meaning, খেলাপি ঋণ, ব্যাংক লোন, বাংলাদেশ ব্যাংক, Finance Bangladesh, Classified Loan.

Post a Comment

Previous Post Next Post