চিকুনগুনিয়া আর্থ্রাইটিস: জ্বর কমে গেলেও ব্যথা কেন যায় না?

চিকুনগুনিয়া আর্থ্রাইটিস: জ্বর কমে গেলেও ব্যথা কেন যায় না?

চিকুনগুনিয়া এক ধরনের ভাইরাসজনিত জ্বর, যা Aedes মশার কামড়ে ছড়ায়। অনেকেই মনে করেন জ্বর কমে গেলেই রোগ শেষ, কিন্তু আসলে সেটিই সবচেয়ে বড় ভুল! কারণ জ্বর সেরে যাওয়ার পরও অনেক রোগী দীর্ঘদিন ধরে জয়েন্টে (হাঁটু, কবজি, কাঁধ, আঙুল) ব্যথা, ফোলা ও দুর্বলতায় ভোগেন।

এ অবস্থাকেই বলা হয়  Post-Chikungunya Arthritis বা চিকুনগুনিয়া আর্থ্রাইটিস।

কেন হয় এই ব্যথা?

চিকুনগুনিয়া ভাইরাস শরীরে প্রবেশ করলে ইমিউন সিস্টেম অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া দেখায়, যার ফলে জয়েন্টে প্রদাহ (inflammation) তৈরি হয়। এই প্রদাহ জ্বর চলে যাওয়ার পরও থেকে যায়, অনেক সময় কয়েক মাস বা এমনকি এক বছর পর্যন্ত ব্যথা অনুভূত হতে পারে।

গবেষণায় দেখা গেছে, প্রায় ৪০–৫০% রোগী জ্বরের পর অন্তত ৩ মাস পর্যন্ত এই ব্যথায় ভোগেন।

লক্ষণ যেগুলো বুঝলে সতর্ক হবেন:

✅ জয়েন্টে টানটান ব্যথা ও ফোলা

✅ সকালে ঘুম থেকে উঠে জয়েন্ট শক্ত হয়ে থাকা

✅ হাঁটা, ওঠা-বসা বা কাজ করতে কষ্ট হওয়া

✅ মাঝে মাঝে জ্বর ফিরে আসা

✅ শরীরে ক্লান্তি, নিদ্রাহীনতা, মনমরা ভাব

চিকিৎসা

ওষুধ:

চিকিৎসকের পরামর্শে Anti-inflammatory ও Analgesic ওষুধ।

কিছু ক্ষেত্রে DMARDs (Disease-Modifying Anti-Rheumatic Drugs) যেমন Hydroxychloroquine ব্যবহার করা হতে পারে, যদি ব্যথা দীর্ঘস্থায়ী হয়।

ফিজিওথেরাপি হালকা ব্যায়াম:

জয়েন্ট নড়াচড়া বজায় রাখে

ফোলা ও ব্যথা কমাতে সহায়তা করে

Lifestyle Care:

পর্যাপ্ত বিশ্রাম

বেশি পানি পান

গরম পানির সেঁক

প্রোটিন ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্টসমৃদ্ধ খাবার (যেমন মাছ, ফল, শাকসবজি, ডাল)

যা কখনোই করবেন না:

🚫 নিজে থেকে শক্ত ব্যথানাশক বা স্টেরয়েড খাবেন না

🚫 ব্যথা সহ্য করে একদম বিশ্রামহীন জীবন যাপন করবেন না

🚫 জয়েন্টে বারবার ঠান্ডা পানি বা বরফ লাগাবেন না (শরীর ঠান্ডা করে ফেলে প্রদাহ বাড়াতে পারে)

চিকিৎসকের পরামর্শে ধৈর্য ধরুন

চিকুনগুনিয়া আর্থ্রাইটিস সাধারণত ধীরে ধীরে ভালো হয়, তবে সঠিক চিকিৎসা ও নিয়মিত ফলো-আপ ছাড়া ব্যথা ক্রনিক (দীর্ঘস্থায়ী) হয়ে যেতে পারে। তাই জ্বর সেরে গেলেও যদি জয়েন্ট ব্যথা না কমে, মেডিসিন বা রিউমাটোলজিস্টের পরামর্শ নিন।

সুস্থ থাকুন, সচেতন থাকুন।

إرسال تعليق

أحدث أقدم