শরীরে শক্তির অভাব বা ক্রমাগত ক্লান্তি (Fatigue)

শরীরে শক্তির অভাব বা ক্রমাগত ক্লান্তি (Fatigue)

শরীরে শক্তির অভাব বা ক্রমাগত ক্লান্তি (Fatigue) সাধারণত বেশ কিছু অপরিহার্য পুষ্টি উপাদানের ঘাটতির প্রধান লক্ষণ। যেহেতু শক্তি উৎপাদনের প্রক্রিয়াটি জটিল, তাই যে পুষ্টিগুলি রক্ত উৎপাদন, অক্সিজেন পরিবহন এবং কোষীয় বিপাকে ভূমিকা রাখে, তাদের ঘাটতি হলে দুর্বলতা দেখা দিতে পারে।

এখানে বিস্তারিত তথ্য দেওয়া হলো:

১. আয়রনের ঘাটতি (Iron Deficiency)

ভূমিকা: আয়রন হলো রক্তে হিমোগ্লোবিন তৈরির জন্য অপরিহার্য একটি উপাদান। হিমোগ্লোবিন লোহিত রক্তকণিকার মাধ্যমে শরীরের প্রতিটি কোষে অক্সিজেন বহন করে।

ঘাটতির প্রভাব: আয়রনের অভাবে রক্তস্বল্পতা বা অ্যানিমিয়া হয়। অক্সিজেনের অভাবে কোষগুলি দক্ষতার সাথে শক্তি (ATP) উৎপাদন করতে পারে না, ফলে:

  • অত্যন্ত ক্লান্তি এবং দুর্বলতা (Fatigue and Weakness)।
  • ফ্যাকাশে ত্বক।
  • শ্বাসকষ্ট।
  •  মাথা ঘোরা বা মাথাব্যথা।

২. ভিটামিন বি১২ (কোবালামিন) এর ঘাটতি (Vitamin B12 Deficiency)

ভূমিকা: ভিটামিন বি১২ লোহিত রক্তকণিকা (#Red_Blood_Cells) তৈরি এবং স্নায়ুতন্ত্রের সঠিক কার্যকারিতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি কোষীয় শক্তির বিপাকেও সাহায্য করে।

ঘাটতির প্রভাব:

ক্লান্তি এবং দুর্বলতা: লোহিত রক্তকণিকা উৎপাদনে বাধা দেয়, ফলে মেগালোব্লাস্টিক অ্যানিমিয়া হতে পারে।

স্নায়বিক সমস্যা: হাত-পায়ে অসাড়তা, ঝিনঝিন করা, ভারসাম্য বজায় রাখতে অসুবিধা এবং স্মৃতিশক্তির সমস্যা।

মেজাজের পরিবর্তন বা বিষণ্নতা।

৩. ভিটামিন ডি এর ঘাটতি (Vitamin D Deficiency)

ভূমিকা: ভিটামিন ডি মূলত হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্য পরিচিত হলেও এটি পেশীর কার্যকারিতা এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার জন্য অপরিহার্য। এটি শক্তির মাত্রার ওপরও প্রভাব ফেলে।

ঘাটতির প্রভাব:

  • দীর্ঘস্থায়ী ক্লান্তি বা অবসাদ।
  • পেশীর দুর্বলতা বা ব্যথা।
  • হাড়ে ব্যথা বা পিঠে ব্যথা।
  • ঘন ঘন মুড পরিবর্তন বা বিষণ্নতা।

৪. ম্যাগনেসিয়ামের ঘাটতি (Magnesium Deficiency)

ভূমিকা: ম্যাগনেসিয়াম ৩০০ টিরও বেশি এনজাইম প্রতিক্রিয়ায় অংশ নেয়, যার মধ্যে শক্তি উৎপাদন (ATP) প্রক্রিয়া একটি।

ঘাটতির প্রভাব:

  • নিম্ন শক্তির মাত্রা এবং ক্লান্তি।
  • পেশীতে টান বা ক্র্যাম্প।
  • ঘুমের সমস্যা বা অনিদ্রা। 
  • উদ্বেগ বা বিরক্তি।

৫. ফলিক এসিড (ভিটামিন বি৯) এর ঘাটতি (Folic Acid Deficiency)

ভূমিকা: এটি ভিটামিন বি১২ এর সাথে মিলে লোহিত রক্তকণিকা তৈরি এবং ডিএনএ সংশ্লেষণে কাজ করে।

ঘাটতির প্রভাব:

  • ক্লান্তি, দুর্বলতা (অ্যানিমিয়ার কারণে)।
  • শ্বাসকষ্ট।
  • মাথাব্যথা।

এই ঘাটতিগুলির মূল কারণ কী হতে পারে?

অপর্যাপ্ত খাদ্য গ্রহণ: খাদ্যে যদি আয়রন, ভিটামিন বি১২ (যা মূলত প্রাণীজ খাদ্যে থাকে, তাই নিরামিষাশীরা বেশি ঝুঁকিতে থাকেন), বা ভিটামিন ডি-সমৃদ্ধ খাবারের অভাব থাকে।

দুর্বল শোষণ (Poor Absorption): পাকস্থলী বা অন্ত্রের কিছু রোগ (যেমন সিলিয়াক ডিজিজ, ক্রোনস ডিজিজ) অথবা পাকস্থলীর অ্যাসিডের অভাবের কারণে পুষ্টি উপাদান শোষণে সমস্যা হতে পারে। (বিশেষ করে ভিটামিন বি১২ এর জন্য)।

শারীরবৃত্তীয় চাহিদা বৃদ্ধি: গর্ভাবস্থা, দ্রুত বৃদ্ধি বা অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের (যেমন মহিলাদের মাসিকের সময়) কারণে শরীরে পুষ্টির চাহিদা বেড়ে গেলে ঘাটতি হতে পারে।

জীবনযাত্রার কারণ: পর্যাপ্ত সূর্যালোকের অভাবে ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি হয়। অতিরিক্ত অ্যালকোহল সেবনও কিছু পুষ্টির শোষণকে বাধা দেয়।

দীর্ঘস্থায়ী রোগ: থাইরয়েড রোগ, ডায়াবেটিস, কিডনি রোগ বা দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহজনিত অসুস্থতা শরীরে শক্তির অভাব ঘটাতে পারে, যা প্রায়শই পুষ্টির ভারসাম্যকে প্রভাবিত করে।

গুরুত্বপূর্ণ উপদেশ:

যদি আপনার শরীরে ক্রমাগত শক্তির অভাব থাকে, তবে অবশ্যই একজন ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা উচিত। শুধুমাত্র একটি রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে আপনার শরীরে কোন পুষ্টির ঘাটতি আছে তা জানা সম্ভব, এবং সেই অনুযায়ী সঠিক চিকিৎসা বা খাদ্যতালিকাগত পরিবর্তন করা যেতে পারে। নিজে থেকে সাপ্লিমেন্ট নেওয়া এড়িয়ে চলুন। #ন্যাচারালখাদ্য #শেয়ারঅ্যান্ডফলোয়ার #এভরিওয়ানফলোয়ার্স

إرسال تعليق

أحدث أقدم