কমন একটি প্রশ্ন! অনেক বাংলাদেশি শিক্ষার্থী, বিশেষ করে যারা সদ্য ব্যাচেলর বা মাস্টার্স শেষ করেছেন, তারা মনে করেন যে সিভিতে যদি ভালো গ্রেড, জব এক্সপেরিয়েন্স, পাবলিকেশন, কো-কারিকুলার একটিভিজ কিংবা ভালো এওয়ার্ডস না থাকে, তবে তাদের বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য আবেদন করার সুযোগ কম। কিন্তু আসলে বিষয়টি তা নয়; বিদেশে উচ্চশিক্ষায় স্কলারশিপ/ ফান্ডিং পেতে হলে SMART হোন; কিভাবে নিজেকে সিভি'তে হাইলাইট করতে হবে এবং কোথায় কোথায় হাইলাইট করতে হবে তা শিখুন।
নিচের লিখাটি ইউরোপাস সিভি তৈরির সময় কিসে ফোকাস করবেন, সে বিষয়ে সাহায্য করবে।
১. আপনার মূল শক্তি: একাডেমিক রেজাল্ট ও কোর্সওয়ার্ক
যদি আপনার CGPA ভালো হয় বা আপনি কিছু গুরুত্বপূর্ণ কোর্সে ভালো করেছেন — তাহলে তা গুরুত্বসহকারে উপস্থাপন করুন।
যেমন:
- GPA: 3.70/4.00 (Top 5% in department)
- Key Courses: Research Methodology, Data Analysis, Instrumentation Lab
আপনি যদি থিসিস বা প্রজেক্টে মনোযোগ দিয়ে কাজ করে থাকেন, সেটিই আপনার সবচেয়ে বড় শক্তি — Abstract টাইপ সামারি সিভি'তে লিখুন।
২. CGPA কম?
সমস্যা না! কী শিখেছেন, সেটাই দেখান।
• আপনার CGPA হয়তো গড়পড়তা, কিন্তু আপনি হয়তো কিছু নির্দিষ্ট বিষয়ে খুব ভালো ছিলেন। সেগুলো হাইলাইট করুন।
• থিসিস বা ফাইনাল প্রজেক্ট ভালোভাবে করেছেন? সেটাই হোক আপনার একাডেমিক শক্তি।
উদাহরণ:
- Though overall CGPA is 3.2 (/modest), performed strongly in lab-based and research courses, such as Instrumentation, Data Analysis, and Heritage Science.
- Thesis focused on low-cost environmental sensors, which reflects my research interest.
থিসিস বা কোনো প্রজেক্টের কাজ যদি ভালো ভাবে করে থাকেন, সেটাই গ্রেডের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ এবং সেটাই হাইলাইট করুন।
৩. জার্নালে কিছু ছাপেননি?
নো প্রবলেম! থিসিস/প্রজেক্টই হতে পারে আপনার রিসার্চ এক্সপোজার কিংবা রিসার্চ/পড়ালেখার প্রতি আপনার আগ্রহের প্রমাণ।
যদিও আপনি এখনও কোনো জার্নালে পাবলিকেশন করেননি, তবুও আপনার থিসিস বা ফাইনাল ইয়ার প্রজেক্টের কাজটি গবেষণার শুরু হিসেবেই বিবেচিত হয়।
আপনার কী করা উচিত:
• থিসিসের সঠিক এবং সময়োপযোগী টাইটেল দিন; রিসার্চ ট্রেন্ড ফলো করে টাইটেল লিখুন
• কাজটি কী নিয়ে ছিল সংক্ষেপে লিখুন
• আপনি কী টুলস, সফটওয়্যার বা মেথড ব্যবহার করেছেন তা লিখুন
উদাহরণ:
Thesis: "Analysis of Water Contamination in Urban Areas using Arduino-based Sensors"
- Collected real-time data and analyzed using Excel and Python
- Presented findings at university seminar
Thesis: “Real-time air quality monitoring using Arduino”
- Used data logging, sensor calibration and basic data analysis using Excel and Python
৪. যারা জার্নাল/পাবলিকেশন করেননি, তারা কী করবেন?
ভয় পাওয়ার কিছু নেই! বিশ্বমানের অনেক স্কলারশিপ প্রোগ্রামে জার্নাল পাবলিকেশন বাধ্যতামূলক নয়। আপনি যদি গবেষণার আগ্রহ ও প্রস্তুতির প্রমাণ দেখাতে পারেন, তাহলেই যথেষ্ট।
যা করতে পারেন:
• নিজের থিসিস বা রিপোর্টকে গবেষণাপত্রে রূপান্তরের চেষ্টা করুন
• গুগল স্কলার বা ResearchGate থেকে রিলেভেন্ট পেপার পড়ে নিজের ফোকাস বাড়ান
• কোন কোন জার্নালে প্রকাশ করা যায়, তা নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি শুরু করুন
• সেমিনারে অংশ নিন, ভার্চুয়াল কনফারেন্সেও অংশ নেওয়া শুরু করুন; সেগুলো সিভি’তে উল্লেখ করুন
৫. কোনো চাকরির অভিজ্ঞতা নেই?
ঠিক আছে! যা করবেন:
• কোনো স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজ, ক্লাস প্রেজেন্টেশন, প্রজেক্টে কাজ, বা ছোটখাটো দায়িত্বও লিখুন।
• যদি ইন্টার্নশিপ করে থাকেন, সে অভিজ্ঞতা দিন—even if unpaid.
উদাহরণ:
- Final year project team leader – Coordinated with 4 members for developing a low-cost environmental monitoring system.
- Team Lead – Final Year Project (Smart Irrigation System)
- Volunteered in university admission assistance team for two years.
কাজের অভিজ্ঞতা না থাকলে, skills, responsibilities & initiatives-এ জোর দিন।
৬. অন্যান্য সেকশন গুলো শক্তিশালী করুন
যেমন:
• ডিজিটাল স্কিলস: Excel, PowerPoint, SPSS, MATLAB, Python — আপনি যা জানেন তা লিখুন
• ভাষাগত দক্ষতা: ইংরেজি দক্ষতার প্রমাণ (IELTS, TOEFL, GRE) থাকলে তা যুক্ত করুন
• সামাজিক দক্ষতা: আপনার টিমওয়ার্ক, দায়িত্ববোধ, এবং যোগাযোগ দক্ষতার প্রমাণ দিন
উদাহরণ:
- Proficient in Microsoft Excel for data handling
- Participated in the university debate competition
- Volunteered in the blood donation camp at the university
৭. ছোট অর্জন বা অবদানও লিখুন
অনেকেই মনে করেন বড় অ্যাওয়ার্ড না থাকলে কিছু লেখার নেই — আসলে যেকোনো দায়িত্ব, ইনিশিয়েটিভ বা স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজ সিভিতে লিখতে পারেন।
যেমন:
• ক্লাস রিপ্রেজেন্টেটিভ হিসেবে দায়িত্ব পালন
• কোনো প্রজেক্ট টিমে লিডারশিপ নিয়েছেন
প্রিয় শিক্ষার্থী, স্কলারশিপ প্রোগ্রামগুলো সবসময় “সেরা ছাত্র” খোঁজে না—তারা খোঁজে “প্রস্তুত শিক্ষার্থী যে যেকোন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সব সময় রেডি”।
ভালো গ্রেড নেই, জব এক্সপেরিয়েন্স নেই, পাবলিকেশন নেই… — তবে যদি আপনি নিজেকে তুলে ধরতে পারেন, আপনার যা আছে সেটাকেই হাইলাইট করতে পারেন, আপনার পরিকল্পনা দেখাতে পারেন, দেখাতে পারেন যে আপনাকে স্কলারশিপ/ ফান্ডিং দিলে আপনি পিছিয়ে থাকবেন না, তবেই আপনি স্কলারশিপ/ফান্ডিং পাবেন।
আপনার জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপই আপনার সিভির অংশ। আজ আপনার যদি জার্নাল না-ও দিয়ে থাকে, কাল তা অবশ্যই পারবেন — যদি আপনি চেষ্টার পথ থেকে না সরে দাঁড়ান। একজন ভালো শিক্ষার্থী মানেই সবসময় পুরস্কারে ভরা সিভি নয়, বরং শেখার ইচ্ছা, গবেষণার আগ্রহ ও প্রমাণিত প্রস্তুতি — এগুলোই বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয় ও স্কলারশিপ কমিটির কাছে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পায়। নিজের সিভি আর নিজের গল্পটা শুরু হোক আজ থেকেই
শুভ কামনা।