চিন্তা আর হজমের মধ্যে অদৃশ্য কিন্তু গভীর সম্পর্ক

চিন্তা আর হজমের মধ্যে অদৃশ্য কিন্তু গভীর সম্পর্ক

আমাদের শরীরের প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ একে অপরের সঙ্গে যুক্ত। মস্তিষ্ক, স্নায়ু আর অন্ত্রের (gut) মধ্যে এক বিশেষ যোগাযোগ আছে, যাকে বিজ্ঞানীরা বলেন “Gut-Brain Connection” বা “দ্বিতীয় মস্তিষ্ক”।

অর্থাৎ, যখন আপনি চিন্তা করেন, ভয় পান, দুশ্চিন্তা করেন — তখন শুধু মন নয়, আপনার পেটও সেই অনুভূতি পেয়ে যায়।

কীভাবে Stress হজমে প্রভাব ফেলে

যখন আমরা মানসিক চাপে থাকি, শরীর তখন ধরে নেয় আমরা বিপদে আছি। তখন আমাদের স্নায়ুতন্ত্র “Fight or Flight mode”-এ যায়। এই অবস্থায় শরীর নিজের সব শক্তি বিপদ মোকাবিলায় ব্যবহার করতে চায় — ফলে:

1. রক্ত প্রবাহ কমে যায় হজমতন্ত্রে, ফলে খাবার ভাঙার কাজ ধীর হয়।

2. Digestive enzymes কম নিঃসৃত হয়, তাই খাবার ঠিকমতো হজম হয় না।

3. পেট ফাঁপা, গ্যাস, অ্যাসিডিটি, কোষ্ঠকাঠিন্য বেড়ে যায়।

4. Cortisol ও Adrenaline হরমোন বেড়ে গিয়ে অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়া ভারসাম্য নষ্ট করে।

5. পেটের স্নায়ু বেশি সংবেদনশীল হয়ে যায়, তাই ছোট সমস্যা বড় ব্যথা মনে হয়।

এভাবেই দীর্ঘদিনের দুশ্চিন্তা বা মানসিক চাপ থেকে IBS, GERD, ulcer বা অন্য হজমের সমস্যাগুলো দেখা দিতে পারে।

কেন মন শান্ত থাকলে হজম ভালো হয়

হজম শুধু পেটের কাজ নয়, এটা মনেরও কাজ।

যখন আপনি শান্ত, প্রশান্ত, আনন্দে থাকেন — তখন শরীর “Rest and Digest mode”-এ চলে যায়।

এই অবস্থায়: পাকস্থলীতে রক্ত প্রবাহ বাড়ে, হজমরস ঠিকভাবে তৈরি হয়,অন্ত্রের নড়াচড়া স্বাভাবিক হয়,আর পেট হালকা ও আরামদায়ক লাগে। অর্থাৎ, মন যদি শান্ত থাকে, পেটও ঠিক থাকে।

কী করলে Stress কমবে ও হজম ভালো হবে

1. খাওয়ার সময় মনোযোগ রাখুন খাবারে — ফোন, টিভি, কথা নয়। শান্তভাবে বসে খান।

2. খাওয়ার আগে ৩–৪টা গভীর শ্বাস নিন — এতে শরীর “relax mode”-এ যায়।

3. অতিরিক্ত ক্যাফেইন, চিনিযুক্ত খাবার, ফাস্টফুড এড়িয়ে চলুন — এগুলো কর্টিসল বাড়ায়।

4. যোগাসন ও প্রণায়াম করুন — Pavanmuktasana, Apanasana, Setu Bandhasana, Nadi Shodhana বিশেষ উপকারী।

5. ঘুম ঠিক রাখুন — পর্যাপ্ত ঘুম না হলে stress হরমোন বেড়ে যায়।

6. প্রতিদিন নিজের জন্য কিছু সময় রাখুন — গান শোনা, হাঁটা, বা নিঃশব্দে বসে থাকা।

মনে রাখুন

আপনি যা খান, তার থেকেও গুরুত্বপূর্ণ হলো — খাওয়ার সময় আপনি কী অনুভব করছেন।

যদি চিন্তা, রাগ বা ভয় নিয়ে খান, শরীর সেই শক্তি শোষণ করতে পারে না। কিন্তু যদি কৃতজ্ঞতা, ভালোবাসা আর শান্তি নিয়ে খান — তখন খাবারও ঔষধে পরিণত হয়।

إرسال تعليق

أحدث أقدم