পিএইচডি করবো নাকি সোজা ইন্ডাস্ট্রিতে জয়েন করবো?

পিএইচডি করবো নাকি সোজা ইন্ডাস্ট্রিতে জয়েন করবো?

আজকাল অনেক ছাত্র-ছাত্রী মাস্টার্স শেষ করে এটা নিয়ে দ্বিধায় পড়ে যায়। এটা খুবই স্বাভাবিক, আমার ক্ষেত্রেও এটাই হয়েছিল। কারণ এটি জীবনের একটা বড় সিদ্ধান্ত! বাস্তবে বলতে গেলে, এটা তোমার ক্যারিয়ার গোল, আর্থিক অবস্থা আর পার্সোনাল লাইফের উপর নির্ভর করে।

যদি তোমার গবেষণায় সত্যি আগ্রহ থাকে আর অ্যাকাডেমিক জগতে থাকতে চাও, তাহলে পিএইচডি ভালো অপশন। কিন্তু যদি তাড়াতাড়ি টাকা কামাতে চাও বা প্র্যাকটিক্যাল অ্যাপ্লিকেশন দেখতে চাও, তাহলে ইন্ডাস্ট্রি জবই বেটার। আমার এক বন্ধু, যে কম্পিউটার সায়েন্সে মাস্টার্স করেছে, ফুল ফান্ডেড পিএইচডি অফার পেয়েও ছেড়ে দিসে, পর একটা স্টার্টআপে জয়েন করেছে। আজ সে কোটি টাকার কোম্পানির উচ্চপদে, কিন্তু সে বলে যে গবেষণা মাঝে মাঝে মিস করে। আমার পরিচিত এক সিনিয়র যে ইকোনমিক্সে পড়তো, সে পিএইচডি শুরু করলো কিন্তু দু’বছর পর ছেড়ে দিয়ে একটা ব্যাঙ্কে জয়েন করলো। আজ উনি বলে যে সেই সিদ্ধান্ত তার লাইফকে স্টেবল করেছে, কারণ ফ্যামিলি সাপোর্ট করতে পেরেছে তাড়াতাড়ি।

সায়েন্স ফিল্ডে পিএইচডির সুবিধা অনেক। এই ফিল্ডে কোনো পার্টিকুলার সাবজেক্টে তোমাকে গভীর জ্ঞান দিবে। যেমন বায়োলজি বা ফিজিক্সে নতুন ডিসকভারি করার সুযোগ আছে। ইন্ডাস্ট্রিতে যাওয়ার পরও এটা তোমাকে অ্যাডভান্সড পজিশনে সাহায্য করবে, যেমন ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিতে রিসার্চ হেড হওয়া। কিন্তু কিছু লিমিটেশনও আছে। পিএইচডি করতে ৪-৬ বছর লাগে, স্টাইপেন্ড কম, আর বর্তমান জব মার্কেটে প্রোফেসরশিপের কম্পিটিশন ভয়ঙ্কর। মাত্র ১০-১৫% পিএইচডি হোল্ডার টেনিউর ট্রাক পজিশন পায়। বাস্তবে, আমার এক ছোট ভাই বায়োকেমিস্ট্রিতে পিএইচডি করে এখন একটা ল্যাবে পোস্টডক করছে, কিন্তু সে বলে যে বয়স বাড়ছে আর ফ্যামিলি প্রেসার নিয়ে তার চিন্তা হয়। অনেকে চাকুরী না পেয়ে একটার পর একটা পোস্ট ডক করে যায়। এটা খুবই বিষণ্ণতার, নিজের জন্য, পরিবারের জন্য এমনকি সেটেলমেন্ট এর জন্য। অন্যদিকে, তার বন্ধু যারা ইন্ডাস্ট্রিতে যায়, তারা তাড়াতাড়ি প্রমোশন পায়, কিন্তু গবেষণার স্বাধীনতা কম। আমি আরেকজনকে চিনি, যে কেমিস্ট্রিতে মাস্টার্স করে সোজা একটা ফার্মা কোম্পানিতে জয়েন করে। দু’বছরে প্রমোশন হয়ে গেলো, আর এখন তার স্যালারি পিএইচডি করা অনেকের চেয়ে বেশি। আবার আমার পাশের রুমে এক ইন্ডিয়ান (akshay) কেমিস্ট্রিতে পোস্ট ডক করে নিজে কেমিক্যাল ব্যাবসা করছে, ইউরোপ, চিনে এক্সপোর্ট করছে।

সোশাল সায়েন্সে, যেমন সাইকোলজি বা ইকোনমিক্সে পিএইচডি করলে সুবিধা হলো সমাজের সমস্যা নিয়ে গভীর অ্যানালিসিস করতে পারা যায়। ক্যারিয়ারে পলিসি মেকিং বা কনসালটেন্সিতে যাওয়ার দরজা খোলে। এটা তোমাকে ক্রিটিক্যাল থিঙ্কিং শিখাবে, যা NGO বা গভর্নমেন্ট জবে কাজে লাগে। কিন্তু লিমিটেশন হলো ফান্ডিং কম, জব অপশন লিমিটেড, আর অনেক সময় অ্যাকাডেমিয়া ছাড়া অন্য জায়গায় ভ্যালু কম মনে হয়। আমি জানি একজনকে, যে সোশ্যালজিতে পিএইচডি করে এখন ইউনিভার্সিটিতে লেকচারার, কিন্তু আগে ইন্ডাস্ট্রিতে মার্কেট রিসার্চ করে অনেক টাকা কামিয়েছে—পরে ফিরে এসেছে গবেষণায়, বলে যে ইন্ডাস্ট্রির অভিজ্ঞতা তার পিএইচডিকে আরও স্ট্রং করেছে। আমার এক বিদেশি ফ্রেন্ড সাইকোলজিতে পড়তো, পিএইচডি শুরু করলো কিন্তু মেন্টাল হেল্থের প্রেসারে ছেড়ে দিয়ে একটা HR কোম্পানিতে জয়েন করলো। আজ সে বলে যে সেই সুইচ তার লাইফ ব্যালেন্স করে দিয়েছে, কারণ তার স্কিলগুলো প্র্যাকটিক্যালি ইউজ করতে পারে। কিন্তু আমাদের বাস্তবতা, মেন্টালিটি তাদের মত না

STEM ফিল্ডে (সায়েন্স, টেকনোলজি, ইঞ্জিনিয়ারিং, ম্যাথ) পিএইচডির সুবিধা বিশাল। এটা তোমাকে ইনোভেশনের ফ্রন্টলাইনে রাখবে, যেমন AI বা ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে। ইন্ডাস্ট্রিতে পিএইচডি হোল্ডারদের স্যালারি হাই, আর কোম্পানি যেমন গুগল বা অ্যামাজন তাদেরকে রিসার্চ রোলে নিয়ে নেয়। কিন্তু লিমিটেশন হলো সময় লাগে, স্ট্রেস হাই, আর অনেকে মাঝপথে ড্রপআউট করে। এলন মাস্কের মতো লোক পিএইচডি ছেড়ে স্পেসএক্স বানিয়েছে, আর সফল হয়েছে, কিন্তু তার মতো তো সবাই পারে না। আমার এক সিনিয়র ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পিএইচডি করে এখন টেক কোম্পানিতে লিডার, বলে যে পিএইচডি ছাড়া এত তাড়াতাড়ি পজিশন পেত না।  আমার এক এক্স কলিগ যে ম্যাথে মাস্টার্স করে সোজা ডাটা সায়েন্স জবে গেলো। দু’বছরে কোম্পানি চেঞ্জ করে স্যালারি ডাবল করলো, কিন্তু এখন আবার তার পিএইচডি করার ইচ্ছে করে যাতে নিজের আইডিয়া ডেভেলপ করতে পারে।

হিউম্যানিটিজে, যেমন হিস্টরি বা লিটারেচারে পিএইচডির সুবিধা হলো কালচারাল ইনসাইট দেয়, আর ক্যারিয়ারে রাইটিং, টিচিং বা মিডিয়াতে যাওয়ার স্কোপ। এটা তোমাকে ক্রিয়েটিভ থিঙ্কার বানাতে পারে, যা কর্পোরেটে সফট স্কিল হিসেবে কাজে লাগে। কিন্তু এই ফিল্ডে লিমিটেশন সবচেয়ে বেশি। জব মার্কেট স্যাচুরেটেড, স্যালারি কম, আর ইন্ডাস্ট্রিতে ডিরেক্ট অ্যাপ্লিকেশন ও কম। আমি জানি একজনকে, যে ইংলিশ লিটারেচারে পিএইচডি করে এখন একটা পাবলিশিং হাউসে এডিটর, কিন্তু আগে ফ্রিল্যান্স রাইটিং করে সারভাইভ করেছে। সে বলে যে পিএইচডি তার লেখাকে ডেপ্থ দিয়েছে, কিন্তু টাকার জন্য ইন্ডাস্ট্রি জয়েন করতে হয়েছে। আমার এক আন্টির মেয়ে হিস্টরিতে পিএইচডি করলো, কিন্তু জব না পেয়ে এখন একটা ব্রিটিশ মিউজিয়ামে কিউরেটর হিসেবে কাজ করে। সে বলে যে পিএইচডি তার প্যাশন ফুলফিল করে, কিন্তু আর্থিকভাবে চ্যালেঞ্জিং ছিলো প্রথমে।

পিএইচডি না ইন্ডাস্ট্রি? 

শেষ কথা হলো এক টনিক সবার জন্য না। দ্বিধা থাকলে নিজের সাথে কথা বলো—কী তোমাকে খুশি করবে? সবচেয়ে সাংঘাতিক হলো কোনোকিছু না ভাবে পিএইচডিতে এনরোল করা। তুমি যখন পিএইচডি / পোস্ট ডক করে বের হবে ততদিনে তোমার সহপাঠী ১০-১৫ বছর অভিজ্ঞতা সম্পন্ন কোনো ইন্ডাস্ট্রিতে আছে। তখন নিজে না পারবে উচ্চপদে জয়েন করতে( অভিজ্ঞতার অভাবে),  না পারবে একেবারে তলানি থেকে শুরু করতে। তাই আমি বলি পিএইচডি একটা জার্নি, ইন্ডাস্ট্রি একটা রেস। দুটোরই ভালো-মন্দ আছে, কিন্তু বাস্তবে অনেকে হাইব্রিড পথ নেয়—পিএইচডি করে ইন্ডাস্ট্রিতে যায়, আবার  ইন্ডাস্ট্রি থেকে পিএইচডিতে আসে। তোমাদের কী মনে হয়? কমেন্টে শেয়ার করতে পারো।

Post a Comment

Previous Post Next Post