পর্ণো গ্রাফিতে সেক্স বনাম বাস্তব সেক্স নিয়ে আলোচনা

পর্ণো গ্রাফিতে সেক্স বনাম বাস্তব সেক্স নিয়ে  আলোচনা

যারা পর্ণোগ্রাফিতে অভিনয় করে তাদেরকে বাছাই করা হয় তাদের শারীরিক গঠন, ফিগার, বিশেষ অঙ্গের আকার দেখে। কিন্তু বাস্তবে সাধারণ মানুষের শরীর বা অঙ্গ তেমন নয়। পর্ণ ইন্ডাস্ট্রিতে কেবল সেইসব অভিনেতাই সুযোগ পায় যাদের অঙ্গ বড় বা শরীর আকর্ষণীয়। ফলে পর্ণোগ্রাফিতে দেখা পুরুষাঙ্গ সাধারণ মানুষের তুলনায় অনেক বড় দেখায়। যৌন বিশেষজ্ঞদের মতে, সাধারণত পুরুষের লিঙ্গ ৩ ইঞ্চি হলেই একজন নারীকে সন্তুষ্ট করতে যথেষ্ট, আর বাংলাদেশের গড় সাইজ প্রায় ৪.৪ ইঞ্চি। অথচ পর্ণোগ্রাফিতে ৬-৯ ইঞ্চি দেখানো হয়। এটা সত্য যে কারও হতে পারে, তবে এটি সাধারণ নয়।

পর্নোগ্রাফিতে নারীর শরীরকে সবসময় এমনভাবে উপস্থাপন করা হয় যেন সেটা নিখুঁত, আকর্ষণীয় আর সবসময় প্রস্তুত। কিন্তু বাস্তবে নারী শরীরের গঠন অনেক বৈচিত্র্যময়। পর্ন ইন্ডাস্ট্রিতে সাধারণত এমন নারী বাছাই করা হয় যাদের শরীর ক্যামেরায় আকর্ষণীয় লাগে যেমন বড় স্তন, টাইট ফিগার, চিকন কোমর, নিতম্ব উঁচু। অনেক সময় এর জন্য কসমেটিক সার্জারি, ব্রেস্ট ইমপ্ল্যান্ট, লিপ ফিলার, এমনকি বডি শেপিং অপারেশন পর্যন্ত করা হয়। এরপর মেকআপ, লাইটিং আর ক্যামেরার এঙ্গেল দিয়ে তাদের শরীরকে আরও নিখুঁত ও চকচকে দেখানো হয়। শুধু তাই নয়, নারীর শরীরকে আকর্ষণীয় দেখাতে বিশেষ ভঙ্গিমা শিখিয়ে দেওয়া হয় কোন অ্যাঙ্গেলে দাঁড়াতে হবে, কোন ভঙ্গিতে শুতে হবে, কিভাবে শব্দ করতে হবে। অনেক সময় শরীরে তেল বা লোশন মাখানো হয় যাতে আলোতে গ্লো করে। তারপর শুটিং শেষে ভিডিও এডিট করে ত্বককে মসৃণ, উজ্জ্বল ও দাগহীন দেখানো হয়।

অন্যদিকে বাস্তব জীবনে একজন নারীর শরীর স্বাভাবিকভাবে বৈচিত্র্যময়। কারও স্তন ছোট, কারও বড়। কারও কোমর চিকন, কারও একটু ভারী। কারও ত্বকে স্ট্রেচ মার্কস, ব্রণ বা দাগ থাকতে পারে। এগুলো স্বাভাবিক, প্রকৃতির অংশ। কিন্তু পর্নের কারণে অনেকেই মনে করে বাস্তব নারীও সবসময় নিখুঁত হবে এটাই বড় ভুল ধারণা।

আসলে, একজন নারীর শরীরকে আকর্ষণীয় করে তোলে শুধু আকার বা ফিগার নয়, বরং তার স্বাভাবিকতা, আত্মবিশ্বাস, এবং একজন সঙ্গীর কাছে তার উপস্থিতি। পর্নে যেটা দেখানো হয় সেটা কৃত্রিম, অভিনয় আর প্রযুক্তির মিশ্রণ; কিন্তু বাস্তব নারী শরীরের সৌন্দর্য হলো তার স্বাভাবিকতা।

টেকনিক্যাল দিক

পর্ণ সিনেমায় দামী ক্যামেরা, লাইটিং ও সাউন্ড সিস্টেম ব্যবহার করা হয়। ক্যামেরার এঙ্গেল, জুম, মেকআপ সবকিছু এমনভাবে দেখানো হয় যাতে জিনিসগুলো বাস্তবের চেয়ে অনেক বড় বা স্পষ্ট মনে হয়। আসলে আপনার চোখ দিয়ে বাস্তবে এভাবে দেখা সম্ভব নয়, একটি ২০–৩০ মিনিটের ভিডিও একবারে শুট হয় না, বরং বিভিন্ন শট আলাদা করে নিয়ে পরে এডিট করে জোড়া লাগানো হয়। অনেক সময় একটি ভালো দৃশ্যের জন্য ১০–১৫ বার শুট করা হয়।

ঔষধ ও প্রস্তুতি

অনেক পর্ন অভিনেতা শুটিংয়ের আগে ইরেকশন ধরে রাখার জন্য ওষুধ বা ইনজেকশন ব্যবহার করে। এতে সাময়িক সুবিধা মিললেও দীর্ঘমেয়াদে ভয়ানক সাইড এফেক্ট হয়। তবে সবাই এসব ওষুধ খায় না কেউ খায়, কেউ স্বাভাবিকভাবেই পারফর্ম করে।

অভিনেত্রীদের ক্ষেত্রে লুব্রিক্যান্ট, মেকআপ, অভিনয় (fake orgasm) ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়।

বাস্তব সেক্স বনাম পর্ন সেক্স

বাস্তবে একজন পুরুষের গড় মিলনকাল ৫–৭ মিনিট। ১–২ ঘণ্টা অবিরাম সেক্স করা বাস্তবে খুব বিরল।নারীরা সাধারণত ভ্যাজাইনাল পেনিট্রেশনের মাধ্যমে অর্গাজম পায় না; তাদের জন্য ক্লিটোরাল উত্তেজনা জরুরি। অথচ পর্নে এসব প্রায় দেখানো হয় না।

বাস্তবে সেক্সের মূল আনন্দ আসে ভালোবাসা, আবেগ, বিশ্বাস, ফোরপ্লে ও পারস্পরিক সম্মতি থেকে যা পর্ন সিনেমায় অনুপস্থিত।

মিলনের সময় নারীর যোনিপথে (vagina) পুরুষাঙ্গ ঢোকা বের হওয়ার কারণে বা ভিন্ন ভিন্ন ভঙ্গিমায় অবস্থান বদলালে ভেতরে বাতাস ঢুকে যায়। যখন সেই বাতাস বের হয়, তখন পাদ দেওয়ার মতো শব্দ হয়। একে বলে vaginal fart বা queef।

বাস্তব সেক্সে এই শব্দ স্বাভাবিক ব্যাপার, কিন্তু পর্নে এগুলো এডিট করে বাদ দেওয়া হয়। এজন্য অনেকেই ভাবে বাস্তবে হয় না। আসলে বাস্তব সেক্স আরও স্বাভাবিক, আর এই ধরনের ঘটনা তার অংশ।

মানসিক ও সামাজিক প্রভাব

পর্নে কোনো লজ্জা, সংকোচ, ভদ্রতা থাকে না। কিন্তু বাস্তবে মানুষের মধ্যে স্বাভাবিকভাবে এগুলো কাজ করে। পর্ন দেখে অনেকেই মনে করে বাস্তবেও এমন হবে, কিন্তু বাস্তব নারী কখনোই পর্ন অভিনেত্রীর মতো আচরণ করে না।

অতিরিক্ত পর্ন আসক্তি হলে মানুষের মধ্যে অস্বাভাবিক প্রত্যাশা (unrealistic expectation) তৈরি হয়, ফলে বাস্তব জীবনের সম্পর্কে হতাশা, অসন্তুষ্টি, এমনকি সম্পর্ক ভাঙনও ঘটতে পারে।

ঝুঁকি ও বিভ্রান্তি

ঝুঁকিপূর্ণ সেক্স বেশি দেখানো হয়, সাথে সামাজিকভাবে অগ্রহণযোগ্য সম্পর্ক ও আছে উত্তজনা বদ্ধি করে। যা বাস্তবে করলে রোগ সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ে ও সামাজিক অবক্ষয়ের সৃষ্টি করে। 

অতিরিক্ত পর্ন আসক্তি হলে ইরেকটাইল ডিসফাংশন, যৌন আগ্রহ কমে যাওয়া, ডিপ্রেশন ইত্যাদি সমস্যা হতে পারে।

পর্নে প্রায় ৮০% দৃশ্যই অতিরঞ্জিত। যত অস্বাভাবিকতা দেখানো হয়, দর্শকের কাছে তা নতুনত্ব মনে হয়। এজন্য সাধারণ সেক্স সেখানে কম দেখানো হয়.! 

পর্ন সিনেমা বাস্তব নয়, এটা অভিনয়। সেখানে শরীর, ওষুধ, ক্যামেরা, এডিট, সবকিছু সাজানো। বাস্তবে সেক্স অনেক ভিন্ন এটা হলো দুজন মানুষের আবেগ, ভালোবাসা ও বিশ্বাসের মিলন। তাই বাস্তবতার সাথে মিলিয়ে জীবনযাপন করা উচিত, পর্নের সাথে নয়। সমস্যা  এর সাথে আলোচনা করেন, আমরা আছি সমস্যা সমাধানে আপনার পাশে।

Post a Comment

Previous Post Next Post