কোষ্ঠকাঠিন্য ও ডায়রিয়া: সাধারণ সমস্যা, গুরুতর পরিণতি - জানুন কারণ ও প্রতিকার

কোষ্ঠকাঠিন্য ও ডায়রিয়া: সাধারণ সমস্যা, গুরুতর পরিণতি - জানুন কারণ ও প্রতিকার

আমাদের দৈনন্দিন জীবনে হজম সংক্রান্ত সমস্যা খুবই সাধারণ একটি বিষয়। এর মধ্যে কোষ্ঠকাঠিন্য এবং ডায়রিয়া সবচেয়ে পরিচিত দুটি সমস্যা। যদিও এ দুটি একে অপরের বিপরীত, দুটোই আমাদের পরিপাকতন্ত্রের ভারসাম্যহীনতার ইঙ্গিত দেয় এবং জীবনযাত্রাকে অস্বস্তিকর করে তোলে। সাধারণ সমস্যা ভেবে এগুলোকে অবহেলা করলে তা পরবর্তীতে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ হতে পারে।

কোষ্ঠকাঠিন্য: যখন মলত্যাগ হয় কষ্টকর

কোষ্ঠকাঠিন্য হলো এমন একটি অবস্থা যখন একজন ব্যক্তির মলত্যাগ স্বাভাবিকের চেয়ে কম হয় (সপ্তাহে তিনবারের কম) এবং মল অত্যন্ত শক্ত ও শুকনো হওয়ার কারণে তা ত্যাগ করতে কষ্ট হয়।

 কারণসমূহ: কেন এই অস্বস্তি?

কোষ্ঠকাঠিন্যের পেছনে সাধারণত আমাদের জীবনযাত্রার কিছু ভুল অভ্যাসই দায়ী থাকে:

আঁশযুক্ত খাবারের অভাব: ফাইবার বা আঁশযুক্ত খাবার (শাকসবজি, ফল, ডাল) মলকে নরম করে এবং এর পরিমাণ বাড়ায়। এর অভাবে মল শক্ত হয়ে যায়।

অপর্যাপ্ত পানি পান: শরীরে পানির ঘাটতি হলে অন্ত্র মল থেকে অতিরিক্ত পানি শোষণ করে নেয়, যার ফলে মল শক্ত ও শুষ্ক হয়ে পড়ে।

শারীরিক নিষ্ক্রিয়তা: নিয়মিত হাঁটাচলা বা ব্যায়াম না করলে অন্ত্রের স্বাভাবিক কার্যকলাপ ধীর হয়ে যায়, যা কোষ্ঠকাঠিন্যের ঝুঁকি বাড়ায়।

মলত্যাগের বেগ চেপে রাখা: সময়মতো মলত্যাগ না করে বেগ চেপে রাখলে তা ধীরে ধীরে কঠিন হয়ে পড়ে এবং পরবর্তীতে সমস্যা তৈরি করে।

কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া: আয়রন, ক্যালসিয়াম বা কিছু ব্যথানাশক ওষুধ কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণ হতে পারে।

প্রতিকার ও প্রতিরোধ:

ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার: খাদ্যতালিকায় প্রচুর পরিমাণে শাক, সবজি, ফল, ডাল, ওটস এবং লাল আটার রুটি যোগ করুন।

প্রচুর পানি পান: দিনে অন্তত ৮-১০ গ্লাস পানি পান করুন।

নিয়মিত ব্যায়াম: প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটা বা হালকা ব্যায়াম করুন। এটি অন্ত্রের সঞ্চালন বাড়াতে সাহায্য করে।

অভ্যাস তৈরি: প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট সময়ে, বিশেষ করে সকালে, মলত্যাগের অভ্যাস গড়ে তুলুন।

ডায়রিয়া: যখন শরীর হারায় নিয়ন্ত্রণ

ডায়রিয়া হলো এমন একটি অবস্থা যেখানে বারবার পাতলা পায়খানা হয়। এটি সাধারণত স্বল্পস্থায়ী হলেও অবহেলা করলে শরীর পানিশূন্য হয়ে মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে।

কারণসমূহ: কেন হয় এই সমস্যা?

সংক্রমণ: ভাইরাস (যেমন: রোটাভাইরাস) বা ব্যাকটেরিয়ার (যেমন: ই. কোলাই, সালমোনেলা) সংক্রমণ ডায়রিয়ার প্রধান কারণ। দূষিত খাবার বা পানির মাধ্যমে এগুলো শরীরে প্রবেশ করে।

খাদ্যজনিত সমস্যা: বাসি বা অস্বাস্থ্যকর খাবার খেলে ফুড পয়জনিং থেকে ডায়রিয়া হতে পারে।

খাদ্যে সংবেদনশীলতা: অনেকের দুধ বা দুগ্ধজাত খাবার হজমে সমস্যা (ল্যাকটোজ ইনটলারেন্স) হয়, যা ডায়রিয়ার কারণ হতে পারে।

ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া: কিছু অ্যান্টিবায়োটিক অন্ত্রের উপকারী ব্যাকটেরিয়া নষ্ট করে দেয়, যার ফলে ডায়রিয়া দেখা দিতে পারে।

প্রতিকার ও করণীয়:

পানিশূন্যতা রোধ: ডায়রিয়ার সবচেয়ে বড় ঝুঁকি হলো পানিশূন্যতা। তাই বারবার স্যালাইন পানি (ORS), ডাবের পানি, ভাতের মাড় বা স্যুপ পান করুন।

সহজপাচ্য খাবার: এই সময়ে সহজপাচ্য খাবার, যেমন—কাঁচকলা, সাদা ভাত, টোস্ট এবং সেদ্ধ আলু খেতে পারেন।

এড়িয়ে চলুন: তৈলাক্ত, ভাজাপোড়া, মশলাদার খাবার এবং দুগ্ধজাত পণ্য সাময়িকভাবে এড়িয়ে চলুন।

বিশ্রাম: শরীরকে সুস্থ হওয়ার জন্য পর্যাপ্ত বিশ্রাম দিন।

কখন ডাক্তারের কাছে যাবেন?

যদি ডায়রিয়ার সাথে তীব্র পেটব্যথা, জ্বর, মলের সাথে রক্ত বা পানিশূন্যতার লক্ষণ (যেমন: মুখ শুকিয়ে যাওয়া, প্রস্রাব কমে যাওয়া) দেখা দেয়, তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

শেষ কথা 

কোষ্ঠকাঠিন্য বা ডায়রিয়া—কোনোটিই অবহেলার বিষয় নয়। সঠিক খাদ্যাভ্যাস, পরিচ্ছন্নতা এবং একটি সক্রিয় জীবনযাত্রার মাধ্যমে এই সমস্যাগুলো অনেকাংশেই প্রতিরোধ করা সম্ভব। আপনার শরীরের কথা শুনুন এবং যেকোনো সমস্যা দীর্ঘস্থায়ী হলে অবশ্যই বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন। সুস্থ পরিপাকতন্ত্রই একটি সুস্থ জীবনের চাবিকাঠি।

إرسال تعليق

أحدث أقدم