শিশুদের বিভিন্ন ভয় যেভাবে ভাঙ্গানো উচিত

শিশুদের বিভিন্ন ভয় যেভাবে ভাঙ্গানো উচিত

ভয় মানুষের একটি স্বাভাবিক আবেগ। একটি শিশুর যখন ভালো-মন্দ বা বিপদ সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা থাকে না, তখন ভয়ই তাকে নিরাপদ রাখতে পারে। যেমন-শিশুর অন্ধকারের ভয়, অপরিচিত মানুষের প্রতি ভয়, প্রাণীর প্রতি ভয় বা উঁচু স্থান থেকে পড়ে যাওয়ার ভয়ের কারণে সে চিৎকার দিয়ে ভয়ের প্রকাশ ঘটায় এবং মা-বাবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে। শৈশবে এ ধরনের 'অহেতুক' ভয় হওয়াটা বিচিত্র নয়।

কিন্তু অহেতুক ভয় যদি অতিরিক্ত হয় এবং তার কারণে যদি শিশুর জীবনের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে কিংবা বিশেষ বিষয় পরিহার করে চলতে হয়, তবে তাকে ফোবিয়া বলা হয়। শিশুর সুষ্ঠু বিকাশের ক্ষেত্রে ফোবিয়া নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। তাই আসুন জেনে নিই শিশুর অহেতুক ভয় প্রতিরোধ ও প্রতিকারের জন্য আমরা কী করতে পারি।

১. অন্ধকার বা রাতের ভয়

যেভাবে ভাঙানো ঠিক নয়: ছোটদের মস্তিষ্কে কল্পনাশক্তি তীব্র থাকে। জোর করে অন্ধকার ঘরে রেখে ভয় কাটাতে গেলে ট্রমা হতে পারে।

উদাহরণ: “তুমি অন্ধকার ঘরে ঢুকো, ভয় পেও না”—এরকম বলার চেয়ে প্রথমে ছোট নাইটলাইট জ্বালিয়ে ধীরে ধীরে অভ্যস্ত করানো ভালো।

২. উচ্চতা (উঁচু জায়গা) থেকে ভয়

যেভাবে ভাঙানো ঠিক নয়: হঠাৎ জোর করে উঁচু জায়গায় তুললে আতঙ্ক ও ভার্টিগো তৈরি হতে পারে।

উদাহরণ: শিশু খেলনার স্লাইডে উঠতে ভয় পাচ্ছে, তাকে একেবারে উপরে তুলে দেওয়া ঠিক নয়; বরং নিচ থেকে হাত ধরে ধীরে ধীরে শেখানো উচিত।

৩. পানি/সুইমিং পুলের ভয়

যেভাবে ভাঙানো ঠিক নয়: হঠাৎ পানিতে ফেলে দিলে ডুবে যাওয়ার আতঙ্ক তৈরি হয়, ভবিষ্যতে সাঁতার শেখার আগ্রহ নষ্ট হয়।

উদাহরণ: ধীরে ধীরে পায়ের পাতায় পানি লাগানো থেকে শুরু করা।

৪. ডাক্তার বা ইনজেকশনের ভয়

যেভাবে ভাঙানো ঠিক নয়: জোর করে ধরে ইনজেকশন দিলে শিশু চিকিৎসা-ভীতি পেতে পারে।

উদাহরণ: আগে থেকে খেলনার সিরিঞ্জ দেখানো, ব্যাখ্যা করা—তারপর ডাক্তার দেখানো।

৫. উচ্চ শব্দ (পটকা, থান্ডার, আতশবাজি)

যেভাবে ভাঙানো ঠিক নয়: হঠাৎ কানফাটা শব্দ শিশুদের জন্য আতঙ্কজনক।

উদাহরণ: উৎসবের আতশবাজি দেখাতে গিয়েই হঠাৎ চালু না করে, দূর থেকে প্রথমে দেখানো।

৬. প্রাণী (কুকুর, বিড়াল ইত্যাদি) ভয়

যেভাবে ভাঙানো ঠিক নয়: জোর করে আদর করাতে গেলে কামড় বা আঁচড়ের ঝুঁকি থাকে।

উদাহরণ: প্রথমে ছবি বা ভিডিও দেখানো, তারপর দূর থেকে পর্যবেক্ষণ।

৭. নতুন জায়গা বা লোকজনের ভয় (সোশ্যাল অ্যানজাইটি)

যেভাবে ভাঙানো ঠিক নয়: হঠাৎ ভিড়ের মধ্যে ঠেলে দিলে শিশু আরও অস্বস্তিতে পড়ে।

উদাহরণ: নতুন স্কুলে ভর্তি করানোর আগে কয়েকদিন আগে থেকে নিয়ে যাওয়া, শিক্ষকের সঙ্গে পরিচয় করানো।

৮. উচ্চ আওয়াজে পারফরম্যান্স (মঞ্চে ওঠা, বক্তব্য)

যেভাবে ভাঙানো ঠিক নয়: জোর করে মাইকে কথা বলালে স্টেজ-ভীতি তৈরি হয়।

উদাহরণ: প্রথমে বাসায় পরিবারের সামনে ছোট ছোট কবিতা বলা।

৯. রক্ত বা আঘাত দেখার ভয়

যেভাবে ভাঙানো ঠিক নয়: হঠাৎ আঘাত বা রক্তের ছবি দেখালে শিশুর মধ্যে শক তৈরি হতে পারে।

উদাহরণ: ধীরে ধীরে সহজ ভাষায় বোঝানো—‘এটা শরীরের অংশ’—তারপর ছবি দেখানো।

১০. বিদ্যুৎ, আগুন, ধারালো জিনিসের ভয়

যেভাবে ভাঙানো ঠিক নয়: এগুলোর ভয় আসলে সুরক্ষার জন্য জরুরি। এই ভয় থাকলে শিশু দূরত্ব বজায় রাখে।

উদাহরণ: গরম চুলা বা সকেটে হাত না দিতে শেখানো—“ভয় পেও না” বলার বদলে “এটা বিপজ্জনক” বলা।

إرسال تعليق

أحدث أقدم