যারা টপলোড নাকি ফ্রন্টলোড ওয়াশিং মেশিন কিনবেন, এটি জানতে চান, তাদের জন্য লেখা।
টপ লোড, যে ফুল অটোমেটিক ওয়াশিং মেশিনের দরজা উপরে থাকে, এটি টপলোড।
যে ওয়াশিং মেশিনের দরজা সামনের দিকে থাকে এটি ফ্রন্টলোড।
এদের মধ্যে মূল পার্থক্য দরজা হলেও ফিচার/বডি কাঠামো/কাপড় ক্লিনে কিছু পার্থক্য আছে।
- টপের চেয়ে ফ্রন্টে ডিটারজেন্ট কম লাগে।
- টপের চেয়ে ফ্রন্টে পানি কম লাগে।
- টপের চেয়ে ফ্রন্টে কাপড় ক্লিন ভালো হয়।
- ওয়ার্লপুল ছাড়া প্রায় সবারই টপে হিটার নাই, সব কোম্পানির ফ্রন্টে হিটার/গরম পানির সুবিধা আছে।
- টপ দেখতে ফ্রন্টের মতো সুন্দর না।
- অনেক টপেই কাপড় পেঁচিয়ে যায়, ফ্রন্টে পেঁচায় না।
- টপের চেয়ে ফ্রন্টের কারেন্ট খরচ বেশি।
- টপের চেয়ে ফ্রন্টে কাপড় বেশি শুকায়।
- টপে যেকোনো সময় ভুলে যাওয়া কাপড়ও ওয়াশের সময় দিয়ে দেওয়া যায়। অ্যাড ওয়াশ ফিচার না থাকলে ফ্রন্টে ওয়াশের সময় আর কাপড় দেওয়া যায় না।
- কিছু টপে অনেক সময় কাপড় ওয়াশ করার পরও কাপড়ে ডিটারজেন্ট থেকে যায়। ফ্রন্টে এরকম হয় না।
- অনেক টপে কম কাপড় হলে স্পিনের সময় মেশিন ভাইব্রেশন করে বেশি। আওয়াজ হয়, মেশিন জায়গা থেকে সরে যায়। ফ্রন্টে এই সমস্যা নাই।
- টপের চেয়ে ফ্রন্টের দাম বেশি, টপের চেয়ে ফ্রন্টের মেইনটেইনেন্স খরচ বেশি।
- টপে কটন কাপড় ফ্রন্টের চেয়ে তাড়াতাড়ি নষ্ট হয়। ফ্রন্টে হিটার আছে বিধায়, কাপড়ের জন্য সঠিক ওয়াশ সাইকেল সিলেক্ট না করলে সব রকমের কাপড়ই তাড়াতাড়ি নষ্ট হয়। বিশেষ করে তাড়াতাড়ি কাপড় থেকে রং উঠে যায়।
- টপের টাব থেকে তেমন ব্যাড স্মেল আসে না, কিছু কিছু ফ্রন্টের টাব থেকে ব্যাড স্মেল আসে।
- প্রযুক্তিগত উন্নয়ন টপে কম, অনেক কোম্পানি টপের উৎপাদন বন্ধ/সীমিত করেছে। ফ্রন্টকে দিনকে দিন অত্যাধুনিক করা হচ্ছে। ডিডি মোটর+ইনভার্টার মোটর, এআই ফিচার, মোবাইল দিয়ে কন্ট্রোল করা, নিজের মতো ওয়াশ মোড সেটিং/বা ডাউনলোড করে রেখে মেশিনে কাপড় ওয়াশ করা এইসব সুবিধাও যোগ করা হচ্ছে ফ্রন্টে।
- যারা মেশিনের জন্য রাখা, বাসার মেইন ড্রেন পাইপকে ফ্লোর সমান রাখতে পারতেছেন না, তাদের জন্য টপ না কিনে ফ্রন্ট নেওয়া ভালো হবে।
- যারা ভাড়া বাসায় থাকেন, আর বিদ্যুতের মিটারের লোড ক্যাপাসিটি ২ কিলোওয়াট, বা এর কম। মিটারের লোডও বাড়ানো সম্ভব না, তারা ফ্রন্ট না কিনে টপ কিনবেন।
- টপের চেয়ে ফ্রন্টের দাম বেশি, কারণ ফ্রন্টের টাব কোয়ালিটি টপের চেয়ে ভালো করতে হয়, হিটার দিতে হয়, ডোর সিলের জন্য ভালো গ্যাসকেট দিতে হয়, ড্রেনেজ পাম্প দিতে হয়, সঙ্গে আরও এক্সট্রা ফিচার তো আছে। আর তাই ফ্রন্টের সার্কিট/পিসিবিরও খরচ বেশি।
- যদু-মধু কোম্পানির ফ্রন্ট নেওয়ার চেয়ে ভালো কোম্পানির টপ নেওয়া ভালো হবে।
- যারা প্রত্যন্ত অঞ্চলে থাকেন, তারা টপ নেওয়ার চেষ্টা করবেন।
- যাদের বাজেট আছে তারা ফ্রন্টের ওয়াশার+ড্রায়ার কম্বো নেওয়ার চেষ্টা করবেন। এতে কাপড় পুরোপুরি শুকিয়ে যায়, মেশিন থেকে কাপড় নিয়ে পরতে পারবেন, আলনায়, সেল্ফে রেখে দিতে পারবেন। রোদে/বাতাসে মেলে দিতে হবে না।
- যাদের ঘনঘন বাসা চেঞ্জ করতে হয়, তারা টপ নিবেন।
- অনেক ইউজার মনে করে ফ্রন্ট নিলে তাদের বাচ্চারা দরজা নষ্ট করে ফেলবে, আসলে এমনটা কমই হয়। প্রায় সব ফ্রন্টেই চাইল্ড লক আছে, ডোর লক করে রাখলে বেবিরা দরজা খুলতে পারবে না।
- যাদের কোমরে/পিঠে সমস্যা তাদের ফ্রন্টলোডে অসুবিধা হয়, তবে কমই হয় এই সমস্যা। চাইলে মোড়ায়, টুলে বসেও মেশিনে কাপড়-চোপড় দেওয়া যায়।
- ওয়াশ সাইকেল শেষ হয়ে যাওয়ার আগে কারেন্ট চলে গেলে ফ্রন্ট থেকে কাপড় বের করা ঝামেলার। ভুলে ডিটারজেন্ট বেশি হলে, ফ্রন্টের ডোর বেয়ে পানি/সাবানের ফেনা বের হয়ে ফ্লোর ভিজিয়ে দেয়, ফ্রন্টে এটিও একটি অসুবিধা।
- ফ্রন্টে স্পিনের সময় মেশিনের আরপিএম (১ মিনিটে মোটর/তথা ড্রামটি কতবার ঘুরবে এটি সেট করে নেওয়া যায়। এতে করে কাপড় বেশি শুকানো যায়, আবার কাপড়ের ধরণ বুঝে স্পিনের স্পিড কম করে দিলে কাপড় নষ্ট কম হয়।
- একই কোম্পানির টব আর ফ্রন্টে লং লাস্টিং/লংজিবিটিতে ফ্রন্টের চেয়ে টপের লাইফটাইম বেশি হয়।
টপ নাকি ফ্রন্ট কোনটি কিনবেন?
সব দিক বিবেচনা করে ফ্রন্ট নেওয়াই সব থেকে ভালো। যেহেতু, ওয়াশিং মেশিন কেনার উদ্দেশ্যই হলো কাপড় ঠিকমতো/ভালোমতো ক্লিন করা। আর এটি টপের চেয়ে ফ্রন্টই ভালোভাবে করে থাকে।
Tags:
Technology