উচ্চশিক্ষায় ‘রেফারেন্স লেটার’ বা সুপারিশপত্র পাওয়ার উপায়


উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয় বাছাই করার অধিকাংশ ক্ষেত্রে ‘রেফারেন্স লেটার’ বা সুপারিশপত্র জমা দিতে হয়। বৃত্তি পাওয়ার ক্ষেত্রে এটি খুব গুরুত্বপূর্ণ। রেফারেন্স লেটার নিয়ে শিক্ষার্থীদের মনে বহু প্রশ্ন থাকে যে কে হবেন রেফারি, কী লেখা থাকবে রেফারেন্স লেটারে, ধরনটা কী রকম হবে ইত্যাদি। রেফারি হলো আপনি যাঁর রেফারেন্স দেবেন বা যিনি আপনার নাম সুপারিশ করবেন। আমাদের আজকের আয়োজনে ইউনিভার্সিটি অব নিউক্যাসল অস্ট্রেলিয়ার গবেষক বিপাশা মতিন এই  প্রসঙ্গে পাঁচটি পরামর্শ দিয়েছেনঃ 

১. কে হতে পারেন রেফারি - আপনার রেফারি হতে পারেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, অফিসের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা (সুপারভাইজার), কিংবা আপনার সঙ্গে কোনো প্রকল্পে কাজ করেছেন এমন কেউ। সাধারণত দুটি রেফারেন্স লেটার লাগে, মাঝে মাঝে তিনটিও চাওয়া হয়। আপনার যদি কাজের অভিজ্ঞতা থাকে, তাহলে একজন শিক্ষক ও আপনি যাঁর সঙ্গে কাজ করছেন, অর্থাৎ আপনার নিয়োগকর্তা হতে পারেন আপনার রেফারি। কর্মক্ষেত্রে আপনার কোনো অভিজ্ঞতা না থাকলে, তাহলে শিক্ষকদের মধ্য থেকেই দুজন আপনার রেফারি হতে পারেন। সেক্ষেত্রে একজন শিক্ষক আপনার গবেষণা-থিসিস সুপারভাইজার হলে ভালো হয়। ফ্যাকাল্টির ডিন বা বিভাগীয় চেয়ারম্যানও কিন্তু এ ক্ষেত্রে ভালো উদাহরণ। রেফারেন্সের প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে আপনাকে যাঁরা চেনেন ও জানেন, তাঁদের কাছ থেকে আপনার সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানা, তাই এমন কাউকে রেফারি হিসেবে নির্বাচন করবেন না, যিনি আপনার কাজ সম্পর্কে জানেন না। 

##Are you rushing to make money online? Then this article is for you!

২. রেফারেন্স লেটারে কী লেখা থাকে - পুরো রেফারেন্স লেটারের চারটি অংশ থাকবে। প্রথম অংশ হলো রেফারি আপনাকে কীভাবে চেনেন, দ্বিতীয় অংশে কেন আপনার কথা তাঁর মনে আছে, তৃতীয় অংশে এত ছাত্রছাত্রীর মধ্যে আপনি আলাদা কেন এবং সবশেষে তিনি আপনাকে কত দিন ধরে চেসেস। এ রকম কিছু দিয়ে শুরু করার পর আপনার ভালো দিকগুলো স্পষ্ট ও সুন্দরভাবে উপস্থাপন করতে হবে। এখানে আপনার দক্ষতার দিকগুলো ছাড়াও অন্যান্য সহশিক্ষামূলক কার্যক্রমের কথা উল্লেখ থাকতে পারে। রিসার্চ কোর্সে আবেদন করলে অবশ্যই এই অংশে আপনার গবেষণা নিয়ে দু–একটা বাক্য থাকা দরকার। পরের অংশে আপনার দু–একটি দুর্বলতার জায়গা (ইতিবাচকভাবে) উল্লেখ করা যেতে পারে। আর সবশেষে তিনি জোরালোভাবে উল্লিখিত পদ/বিষয়/প্রোগ্রামের জন্য আপনার নাম সুপারিশ করবেন।

৩. কীভাবে জমা দেব - বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় বা স্কলারশিপ কমিটি নিজেরাই আপনার রেফারির সঙ্গে যোগাযোগ করে রেফারেন্স লেটার চেয়ে নেবে। এ ক্ষেত্রে আপনি আবেদনের সময় শুধু রেফারির নাম, পদবি, ই–মেইল ও ফোন নম্বর উল্লেখ করবেন। আবার অনেক সময় বিষয়টি পুরোপুরি নির্ভর করছে বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা স্কলারশিপ কমিটির সিদ্ধান্তের ওপর। তারা কখনো কখনো আপনার কাছেই রেফারেন্স লেটার চাইবে, যা আপনাকেই নির্ধারিত নিয়মে আপলোড করতে হবে। সে ক্ষেত্রে লেটারটি আপনি আগে থেকেই স্বাক্ষরসহ স্ক্যান করে রাখবেন এবং পরে আবেদনের সময় আপলোড করবেন। 

৪. রেফারিকে মনে করিয়ে দেওয়া - আপনাকে মাঝে মাঝে জানানো হতে পারে যে বিশ্ববিদ্যালয় বা বৃত্তি কর্তৃপক্ষের ‘সিলেকশন কমিটি’ রেফারির কাছ থেকে সাড়া পেয়েছে কি না। আবার না-ও জানানো হতে পারে। সে ক্ষেত্রে আপনারই উচিত হবে রেফারিকে স্মরণ করিয়ে দেওয়া এবং অনেকটা লেগে থেকেই রেফারেন্স লেটার আপলোড করানো। আপনাকে মনে রাখতে হবে যে, রেফারি উত্তর না দেওয়া পর্যন্ত আপনার আবেদন কিন্তু সম্পূর্ণ হবে না। তাই নিজ উদ্যোগেই রেফারির সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখবেন। আপনার নাম, পরিচয়, কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে বা কোন বৃত্তির জন্য কোন বিষয়/প্রোগ্রামে আপনি আবেদন করেছেন, এসব সম্পর্কে তাঁকে অবগত রাখুন। অনলাইনে আবেদন করলে আপনি অবশ্য রেফারেন্সের’ স্ট্যাটাস’ দেখতে পাবেন। সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিলে আশা করা যায় আপনার রেফেরেন্স লেটার পউছে যাবে।  

৫. খসড়া তৈরি ও প্রয়োজনীয় সংশোধন - বাংলাদেশ এর  পরিপ্রেক্ষিতে, বেশির ভাগ রেফারিই আপনাকে বলবেন একটা ড্রাফট তৈরি করে আনতে। এটি আপনার জন্য একটি সুযোগ। আপনি জানেন আপনার কোন বিষয়গুলো রেফারেন্সে আসা উচিত, তাই নিজেই উল্লেখ করে দিতে পারেন। খসড়া লেখার ক্ষেত্রে ব্যাকরণ ও বানানের দিকগুলো বারবার দেখবেন, যেন কোনো ভুল না থাকে। রেফারেন্স লেটারের খসড়া তৈরি করতে গিয়ে কখনোই গুগল থেকে সরাসরি ‘কপি-পেস্ট’ করবেন না। নিজের ব্যাপারে অতিরঞ্জিত প্রশংসা কিংবা সমালোচনা, কোনোটাই করা যাবে না। আবার তাই বলে গতানুগতিক, একঘেয়ে ধরনের লেখাও কার্যকর হবে না। আপনার দক্ষতাগুলোকে গল্পের মতো করে উপস্থাপনের চেষ্টা করুন।  

৬. আরও কিছু বিষয় - রেফারির ই–মেইল আইডি অবশ্যই অফিশিয়াল হতে হবে। জিমেইল অথবা ইয়াহু ছাড়া যদি আর কোনো ই–মেইল আইডি না থাকে, তবে তাঁকে রেফারি না রাখাটাই সমীচীন। কাজ হয়ে গেলে রেফারিকে অবশ্যই ধন্যবাদ জানাবেন। নিজের একটি সিভি রেফারিকে দিয়ে রাখতে পারেন, যেন লেখার সময় তিনি আপনার সম্পর্কে ধারণা পেতে পারেন। আপনি হয়তো একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করছেন। একজন রেফারিকে বারবার বিরক্ত না করে বিশ্ববিদ্যালয়ভেদে একাধিক রেফারির নাম উল্লেখ করতে পারেন। কখনো কখনো শিক্ষকদের ‘টিচিং অ্যাসিস্ট্যান্ট’রা এ ক্ষেত্রে ভালো ভূমিকা রাখেন। শিক্ষককে বারবার বিরক্ত না করে আপনি টিচিং অ্যাসিস্ট্যান্টের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে পারেন।

إرسال تعليق

أحدث أقدم