সালাত বিষয়ক বর্জনীয় কাজ: নীরবে আমীন বলা

সালাত বিষয়ক বর্জনীয় কাজ: নীরবে আমীন বলা

সুন্নাত হল সরবে আমীন বলা। নীরবে আমীন বলার পক্ষে যে কয়টি বর্ণনা এসেছে, তার সবই যঈফ ও জাল।

(ক) আলক্বামা ইবনু ওয়ায়েল (রাদিয়াল্লাহু আনহু) তার পিতা হতে বর্ণনা করেন যে, তিনি একদা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে সালাত আদায় করেন। যখন তিনি ‘গাইরিল মাগযূবি আলাইহিম ওয়ালাযযা-ল্লিন’ পর্যন্ত পৌঁছলেন, তখন আমীন বললেন। তিনি আওয়ায করলেন নিম্নস্বরে। [তিরমিযীঃ ১/৫৮, হাদিসঃ ২৪৮-এর শেষাংশ।]

বর্ণনাটি নিতান্তই যঈফ। ইমাম তিরমিযী (রহঃ) বলেন,

سَمِعْت مُحَمَّدًا يَقُوْلُ حَدِيْثُ سُفْيَانَ أَصَحُّ مِنْ حَدِيثِ شُعْبَةَ فِي هَذَا وَأَخْطَأَ شُعْبَةُ فِىْ مَوَاضِعَ مِنْ هَذَا الْحَدِيْثِ فَقَالَ عَنْ حُجْرٍ أَبِي الْعَنْبَسِ وَإِنَّمَا هُوَ حُجْرُ بْنُ عَنْبَسٍ وَيُكْنَى أَبَا السَّكَنِ وَزَادَ فِيهِ عَنْ عَلْقَمَةَ بْنِ وَائِلٍ وَلَيْسَ فِيْهِ عَنْ عَلْقَمَةَ وَإِنَّمَا هُوَ عَنْ حُجْرِ بْنِ عَنْبَسٍ عَنْ وَائِلِ بْنِ حُجْرٍ وَقَالَ وَخَفَضَ بِهَا صَوْتَهُ وَإِنَّمَا هُوَ وَمَدَّ بِهَا صَوْتَهُ.

ইমাম তিরমিযী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, মুহাম্মাদকে (ইমাম বুখারী (রাহিমাহুল্লাহ)-কে) বলতে শুনেছি যে, সুফিয়ান (রাহিমাহুল্লাহ)-এর হাদীছ শু‘বার হাদীছের চেয়ে অধিক সহীহ। এই হাদীছে শু‘বা অনেক জায়গায় ভুল করেছে। সে বর্ণনা করেছে হুজর আবুল আনবাস থেকে। অথচ তিনি হলেন, হুজর বিন আনবাস। তার উপাধি আবু সাকান। সে বৃদ্ধি করেছে আলক্বামা বিন ওয়ায়েল। অথচ তাতে আলক্বামা নেই। মূলত তা হবে ওয়ায়েল বিন হুজর থেকে হুজর বিন আনবাস। এছাড়া সে বলেছে, ‘তিনি নিম্নস্বরে বলেন’। অথচ তা হবে ‘তিনি তার স্বর উচ্চ করেন’। [তিরমিযীঃ ১/৫৮ পৃষ্ঠা।] ইমাম তিরমিযী (রাহিমাহুল্লাহ) আরো বলেন, سَأَلْتُ أَبَا زُرْعَةَ عَنْ هَذَا الْحَدِيْثِ فَقَالَ حَدِيْثُ سُفْيَانَ فِيْ هَذَا أَصَحُّ مِنْ حَدِيْثِ شُعْبَةَ ‘এই হাদীছ সম্পর্কে আমি আবু যুর‘আকে জিজ্ঞেস করলাম।

তিনি উত্তরে বললেন, শু‘বার হাদীছের চেয়ে সুফিয়ান বর্ণিত হাদীছ অধিকতর সহীহ। [তিরমিযীঃ ১/৫৮, হাদিসঃ ২৪৮-এর শেষাংশ।]

(খ) আবু হুরায়রা (রাদিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন ‘গাইরিল মাগযূবি আলাইহিম ওয়ালায য-ল্লীন’ তেলাওয়াত করতেন, তখন এমনভাবে ‘আমীন’ বলতেন, যাতে প্রথম কাতারে যারা নিকটে থাকত তারা তা শুনতে পেত। [আবুদাঊদঃ ৯৩৪।]

হাদীছটি যঈফ। এর সনদে বাশার বিন রাফে‘ ও আবু আব্দুল্লাহ নামে দুইজন যঈফ রাবী আছে। [সিলসিলাহ যঈফাহঃ ৯৫২।] তাছাড়া উচ্চৈঃস্বরে আমীন বলার পক্ষে আবু হুরায়রা (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে সহীহ আছার বর্ণিত হয়েছে। [বায়হাক্বী, সুনানুল কুবরাঃ ২৫৫৪; সনদ সহীহ, সিলসিলাহ যঈফাহঃ ৯৫২-এর আলোচনা দ্রষ্টব্য।]

জ্ঞাতব্যঃ উক্ত বর্ণনাগুলো ছাড়াও কতিপয় ছাহাবী (রাদিয়াল্লাহু আনহু) ও তাবেঈ (রাহিমাহুল্লাহ)-এর নামে কিছু আছার বর্ণিত হয়েছে, যা বাজারে প্রচলিত ‘নামায শিক্ষা’ পুস্তকগুলোতে পাওয়া যায়। [ত্বাহাবীঃ ১/৯৯ পৃষ্ঠা; মুছান্নাফ আব্দুর রাযযাকঃ ২/৮৭; মুছান্নাফ ইবনে আবী শায়বাহঃ ৮৯৪১, ২/৫৩৬; মাজমাউয যাওয়েদঃ ১/১৮৫ পৃষ্ঠা; কানযুল উম্মালঃ ৪/২৪৯; মাযহাব বিরোধীদের স্বরূপ সন্ধানে, পৃষ্ঠাঃ ৩১৯।] সেগুলো দ্বারা বিভ্রান্ত হওয়া যাবে না। কারণ সেগুলোর কোনটিই সহীহ নয়। আমাদেরকে সহীহ বর্ণনার সামনে আত্মসমর্পণ করতে হবে।

উপস্থাপনায়ঃ মোঃ আব্দুল গফুর

Post a Comment

Previous Post Next Post