অনেকেরই স্বপ্ন — একদিন যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়া। কেউ চান উচ্চশিক্ষা, কেউ ভালো চাকরি, কেউ আবার নিজের পরিবারের ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে চান এক নতুন দেশে। কিন্তু খুব কম মানুষই জানেন, যুক্তরাষ্ট্রে আসলে কত রকম ভিসা আছে এবং সাময়িক ভিসায় গিয়ে কীভাবে বৈধভাবে স্থায়ী হওয়া সম্ভব।
মোট কত ধরনের ভিসা আছে?
অনেকে ভাবেন যুক্তরাষ্ট্রে হয়তো কয়েকটি ভিসাই আছে — কিন্তু আসলে সংখ্যা অনেক বেশি। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর (U.S. Department of State) ও USCIS-এর তথ্য অনুযায়ী বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে ১৮০টিরও বেশি ভিসা ক্যাটাগরি রয়েছে। এর মধ্যে কিছু মূল বিভাগ —
1. ইমিগ্র্যান্ট ভিসা (Immigrant Visa): স্থায়ী বসবাসের অনুমতি বা গ্রিন কার্ডের জন্য।
2. নন-ইমিগ্র্যান্ট ভিসা (Non-Immigrant Visa): সাময়িক ভ্রমণ, পড়াশোনা, কাজ বা ব্যবসার জন্য।
অর্থাৎ, উদ্দেশ্যভেদে শতাধিক ভিসার ধরন — কেউ যেতে পারেন পড়াশোনার জন্য, কেউ কাজের জন্য, কেউ চিকিৎসার জন্য, কেউ আবার পরিবারের মাধ্যমে স্থায়ীভাবে থাকার জন্য।
ইমিগ্র্যান্ট ভিসা (Immigrant Visa)
এই ভিসায় যুক্তরাষ্ট্রে গেলে স্থায়ীভাবে বসবাসের অনুমতি মেলে, অর্থাৎ গ্রিন কার্ড। মূল পথগুলো হলো
পরিবারভিত্তিক ভিসা: মার্কিন নাগরিকের স্বামী/স্ত্রী, সন্তান, বাবা-মা বা ভাই-বোনের জন্য।
চাকরিভিত্তিক ভিসা (EB-1 থেকে EB-5): দক্ষ পেশাজীবী, বিনিয়োগকারী বা বিশেষ যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্য।
ডাইভারসিটি ভিসা (DV Lottery): যেসব দেশের অভিবাসন সংখ্যা কম, তাদের জন্য লটারির মাধ্যমে।
রিফিউজি ও আশ্রয় প্রোগ্রাম: নির্যাতন বা যুদ্ধ থেকে পালিয়ে আসা মানুষদের জন্য।
নন-ইমিগ্র্যান্ট ভিসা (Non-Immigrant Visa)
এই ভিসা দেওয়া হয় সাময়িকভাবে যুক্তরাষ্ট্রে থাকার জন্য।
সবচেয়ে প্রচলিত ভিসাগুলো হলো —
B1/B2 (ট্যুরিস্ট/বিজনেস), F-1 (ছাত্র), J-1 (এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রাম), H-1B (চাকরি), L-1 (কোম্পানি ট্রান্সফার), O-1 (বিশেষ প্রতিভা), R-1 (ধর্মীয় কর্মী), E-2 (ইনভেস্টর) এবং K-1 (fiancé(e) ভিসা)।
এছাড়া কূটনৈতিক (A/G), ট্রানজিট ও ক্রু (C/D), এবং অপরাধ বা মানব পাচারের শিকারদের (U/T) জন্যও আলাদা ভিসা রয়েছে।
এইসব ধরন মিলিয়ে মোট ভিসার সংখ্যা দাঁড়ায় ১৮০টিরও বেশি — যা বিশ্বের যেকোনো দেশের চেয়ে বেশি বৈচিত্র্যপূর্ণ।
নন-ইমিগ্র্যান্ট ভিসায় এসে কীভাবে পাওয়া যায় গ্রিন কার্ড?
অনেকে পড়াশোনা বা চাকরির ভিসায় যুক্তরাষ্ট্রে এসে একসময় স্থায়ীভাবে থেকে যেতে চান। এটি আইনসঙ্গতভাবে সম্ভব, যদি আপনি নিম্নলিখিত বৈধ পথগুলোর একটিতে যোগ্য হন —
- পরিবারের মাধ্যমে: যুক্তরাষ্ট্রে কোনো মার্কিন নাগরিককে বিয়ে করলে, বা আপনার নিকট আত্মীয় নাগরিক হলে।
- চাকরির মাধ্যমে: আপনি যদি H-1B বা L-1 ভিসায় কাজ করেন এবং আপনার Employer স্পনসর করতে রাজি হন।
- ডাইভারসিটি লটারি (DV): লটারিতে নির্বাচিত হলে যুক্তরাষ্ট্রে থেকেই স্ট্যাটাস পরিবর্তন করে গ্রিন কার্ড নেওয়া যায়।
- আশ্রয় (Asylum) বা রিফিউজি প্রোগ্রাম: নির্যাতন বা বিপদের কারণে আশ্রয় পাওয়া গেলে নির্দিষ্ট সময় পরে গ্রিন কার্ডের আবেদন করা যায়।
সব ক্ষেত্রেই নিয়ম, সময় ও আইন আলাদা। তাই অভিজ্ঞ আইনজীবী বা অনুমোদিত পরামর্শকের সাহায্য নেওয়া জরুরি।
অবৈধ পথে যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়া থেকে বিরত থাকুন
অনেকে স্বপ্নের টানে বিপজ্জনক পথে যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার চেষ্টা করেন।
কিন্তু দয়া করে মনে রাখবেন — অবৈধভাবে প্রবেশের চেষ্টা কখনোই সমাধান নয়, বরং এক ভয়াবহ ঝুঁকি। পথে খাদ্য ও পানির অভাব, মরুভূমি ও সমুদ্রপথের ভয়, মানবপাচারকারীদের প্রতারণা — এসব বিপদে অনেকেই জীবনের ঝুঁকি নেন। আর যদি ধরা পড়েন, তবে হতে পারে গ্রেফতার, ডিপোর্টেশন, এবং ভবিষ্যতে কোনো ভিসা বা গ্রিন কার্ড পাওয়ার সুযোগ চিরতরে হারিয়ে ফেলা।
স্বপ্ন দেখা সুন্দর, কিন্তু জীবন আরও মূল্যবান।
তাই যুক্তরাষ্ট্রে যেতে চাইলে তথ্য জানুন, বৈধ পথে চলুন, আর ধৈর্য ধরে প্রস্তুতি নিন। সঠিক পথ কখনো সহজ না, কিন্তু সেটাই নিরাপদ, স্থায়ী এবং সম্মানজনক।
স্বপ্ন তখনই বাস্তব হয়, যখন আপনি জানেন আপনার পথটা সঠিক।
ভয় নয়, ধৈর্য আর জ্ঞানই হোক আপনার ভিসা যাত্রার প্রথম পদক্ষেপ।