জমির দলিল আছে ও দখল আছে কিন্তু রেকর্ড নেই - এই অবস্থা হলে কী করণীয়??

জমির দলিল আছে ও দখল আছে কিন্তু রেকর্ড নেই - এই অবস্থা হলে কী করণীয়??

এটা একদিকে শক্তিশালী আইনি অবস্থান, আবার কিছু ঝুঁকিও থাকে। নিচে বিষয়টা ধাপে ধাপে বিশ্লেষণ করছিঃ—

প্রথমত, যদি আপনার কাছে রেজিস্ট্রিকৃত দলিল (যেমন বিক্রয় দলিল বা হেবা দলিল) থাকে, তাহলে এটি জমির মালিকানার অন্যতম প্রধান প্রমাণ হিসেবে ধরা হয়। এটি আপনার পক্ষে একটি শক্তিশালী দিক।

দ্বিতীয়ত, আপনি যদি বাস্তবে জমির উপর দখলে থাকেন, অর্থাৎ জমি ব্যবহার করছেন, চাষাবাদ করছেন বা সেখানে বসবাস করছেন—তাহলে এটাও আদালতে আপনার দিককে শক্তিশালী করে।

তবে সমস্যা দেখা দিতে পারে যদি সরকারি খতিয়ান বা রেকর্ডে (যেমন CS, RS, বা BS খতিয়ান) আপনার নাম না থাকে। কারণ সরকারি রেকর্ড না থাকলে আপনার মালিকানার দাবি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে। এটি একটি ঝুঁকিপূর্ণ দিক।

🔸 দলিল + দখল ঠিক থাকলে সাধারণত ৭০%-৮০% সম্ভাবনা থাকে আদালতে মালিকানা প্রমাণ করে জমি পাওয়ার।

🔸 তবে রেকর্ড (খতিয়ান) আপনার নামে না থাকায় সরকারিভাবে জমির মালিক হিসাবে আপনি দেখাবেন না — এটাই ভবিষ্যতের জন্য বিপদজনক হতে পারে।

রেকর্ড নিজের নামে আনতে যা করবেন (৫টি ধাপে):

🔶 ধাপ ১: খতিয়ান যাচাই – CS, SA, RS, BS — কোন খতিয়ানে আপনার নাম নেই, সেটা আগে নিশ্চিত করুন। – তথ্য পেতে জেলা রেকর্ড রুম বা land gov bd ওয়েবসাইট ব্যবহার করুন।

🔶 ধাপ ২: দখলের প্রমাণ প্রস্তুত – জমিতে ঘর, গাছ, চাষ, ভাড়া, খাজনা ইত্যাদির প্রমাণ রাখুন। – ছবি, খাজনার রসিদ, স্থানীয় সাক্ষ্য এসব দরকার হতে পারে।

🔶 ধাপ ৩: Mutation (নামজারি) আবেদন – ইউনিয়ন বা উপজেলা ভূমি অফিসে দলিল + দখলের ভিত্তিতে নামজারির আবেদন করুন। – প্রয়োজনে RS বা BS সংশোধনের আবেদনও দিতে হবে।

🔶 ধাপ ৪: রেকর্ড সংশোধনের মামলা (12(1)/12(2) MLRA) – ভূমি অফিস আবেদন খারিজ করলে AC Land অফিসে আপিল করুন। – তাতেও না হলে সিভিল কোর্টে খতিয়ান সংশোধনের মামলা করতে হবে।

🔶 ধাপ ৫: আদালতের রায় দেখিয়ে সংশোধন করুন – আদালত মালিকানা স্বীকৃতি দিলে, সেই রায়ের কপি জমা দিয়ে ভূমি অফিস থেকে রেকর্ড সংশোধন করান।

প্রয়োজনীয় কাগজপত্র:

– দলিলের কপি (রেজিস্ট্রেশন নম্বরসহ)

– দখলের প্রমাণ (ছবি, চাষাবাদ, গাছ, ঘর ইত্যাদি)

– খাজনার রসিদ (যদি থাকে)

– জাতীয় পরিচয়পত্র

– খতিয়ানের কপি (CS/SA/RS/BS)

– ওয়ারিশ সনদ (প্রয়োজনে)

সংক্ষেপে:

দলিল আছে: জমির মালিকানার প্রথম ও প্রধান প্রমাণ।

দখল আছে: জমির বাস্তব নিয়ন্ত্রণ ও নিয়মিত ব্যবহার নির্দেশ করে।

রেকর্ড নেই: ঝুঁকির কারণ; নামজারি বা সরকারি রেকর্ড সংশোধন করা জরুরি।

করণীয়: মিউটেশন (Mutation) প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা এবং প্রয়োজনে রেকর্ড সংশোধনের জন্য মামলা করা।

Post a Comment

Previous Post Next Post