বছরে অন্তত একবার হলেও লিপিড প্রোফাইল চেক করুন বিপদ আসার আগেই !

বছরে অন্তত একবার হলেও লিপিড প্রোফাইল চেক করুন বিপদ আসার আগেই !

লিপিড প্রোফাইল টেস্ট কি ? 

এটা হচ্ছে সোজা বাংলায় কোলেস্টেরল টেস্ট। তিন ধরণের কোলেস্টেরল চেক করা হয় এই টেস্টে।

HDL - high-density lipoprotein . ঘণ চর্বি (সোজা বাংলায়)

LDL - ligh-density lipoprotein বা সোজা বাংলায় পাতলা চর্বি।

triglycerides - ট্রাইগ্লিসারাইড

ঘণ চর্বি বেশি থাকলে ভালো।  পাতলা চর্বি বেশি থাকা খারাপ। ট্রাইগ্লিসারাইড বেশি থাকা আরো খারাপ।

HDL বা ঘণ চর্বি থাকে পরিমিত পরিমান ঘিয়ে, বাদামে, ওমেগা ত্রি যুক্ত ডিম, ফ্যাটি এসিড বিশিষ্ট মাছ (তৈলাক্ত মাছ) 

LDL বা পাতলা চর্বি বাড়ে বিভিন্ন ভাঁজা পোড়া, ফাস্ট ফুড (পিজ্জা, বার্গার শর্মা ইত্যাদি), ট্রান্সফ্যাট বিশিষ্ট খাবার খেলে। ট্র্যান্স ফ্যাট থাকে সয়াবিন তেলে। তাই এই তেলে রান্না করা খাবার খাওয়া ঠিক না। সরিষার তেল ব্যবহার করুন।

HDL এবং LDL সম্পর্কে এগুলা হয়তো অনেকেই জানেন, তাই আর বিস্তারিত বললাম না। 

বিস্তারিত বলব ট্রাইগ্লিসারাইড নিয়ে। এটা কি ? এটা হচ্ছে এমন একটা ফ্যাট যেটা শরীরের থাকা অতিরিক্ত চিনি বা শর্করা জমিয়ে রাখে যদি তা ব্যবহৃত না হয়। 

তাই, আপনি যেই ভাত খাচ্ছেন, মিষ্টি খাচ্ছেন, কেক, বিস্কিট চানাচুর ইত্যাদি খাচ্ছেন, এগুলার মাধ্যমে যেই ক্যালরি নিচ্ছেন (চিনি, শর্করা এগুলা সবই ক্যালরি), চিন্তা করে দেখুন তো সেই পরিমাণ কাজ কি আমরা আসলেই করি ? উত্তর হচ্ছে, না। আমরা বেশিরভাগই ডেস্কজব করি, কিংবা হোমমেকিং করি। অথব আমরা যেই পরিমানে খাই, সাধারণত রিকশা টানা বা কৃষিকাজ বা কুলির কাজ করা ছাড়া এই এনার্জি ব্যয় করা সম্ভব না। 

ট্রাইগ্লিসারাইড কেন বেশি খারাপ 

ট্রাইগ্লিসারাইড শরীরের অতিরিক্ত ক্যালরির স্টোরেজ ফ্যাট, যা মূলত ফ্যাট সেল ও লিভারে জমে। লিভারে জমে হলে ফ্যাটি লিভার হয়। আর রক্তে বেশি ট্রাইগ্লিসারাইড থাকলে তা LDL  কণার মাধ্যমে ধমনীর দেয়ালে প্লাক জমায়, যা হার্ট ব্লক ও হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ায়। তাই স্বাভাবিক সীমার বাইরে যেতে দেয়া যাবে না। ট্রাইগ্লিসারাইডেক অতিরিক্ত মাত্রা HDL কমায় এবং LDL বাড়ায়।

পরিমিত মাত্রা কতটুকু ?

  • ১৫০ এর কম থাকলে তা পরিমিত। 
  • ১৫০-১৯৯ এর মধ্যে থাকলে তা বর্ডারলাইন হাই। এতে ভবিষ্যতে হার্ট ও ফ্যাটি লিভারের ঝুঁকি বাড়তে শুরু করে (আল্লাহ না করুন)
  • ২০০-৪৯৯ঃ হাই। হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক, ফ্যাটি লিভার ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বেশি।
  • ৫০০ এর উপরেঃ খুবই বেশি। প্যানক্রিয়াটাইটিস, মারাত্মক হার্ট ও লিভার সমস্যা হতে পারে।

ট্রাইগ্লিসারাইড কমাতে কার্যকরী খাবারঃ

গ্রিন টি

মেথি বীজ

ফ্ল্যাক্সসিড

রসুন

পেয়াজ

কালিজিরা (সীমিত পরিমাণে)

শাকসবজি:

শাক (পালং, লাল শাক, পুঁই শাক), সবুজ শাকসবজি, বরবটি, করলা, লাউ, মুলা, শসা, ফুলকপি, বাঁধাকপি), গাজর, বেগুন, কুমড়া

ফল (সীমিত পরিমাণে)ঃ কমলা, মাল্টা, আপেল, পেয়ারা, জাম, বেরি জাতীয় ফল, কলা ও আম সীমিত, কারণ এগুলোতে চিনি বেশি।

প্রোটিনঃ মাছ (বিশেষ করে নদীর ছোট মাছ, ইলিশ/রুই/কাতলা তেলে ভেজে নয়, সেদ্ধ/ঝোল/গ্রিল), মুরগির বুকের মাংস (চামড়া ছাড়া), ডাল, ছোলা, মসুর, ডিমের সাদা অংশ

তেল: সীমিত পরিমাণে অলিভ অয়েল, সরিষার তেল বা সয়াবিন তেল। দিনে মোট ২–৩ চামচের বেশি তেল খাবেন না

কার্বোহাইড্রেট (শর্করা): লাল চাল/আটা/ওটস/ডালিয়া, ব্রাউন ব্রেড (সীমিত)

আর প্রচুর পানি খাবেন।

বাদাম খাবেন (কাঠ বাদাম, আখরোট) তবে পরমানমত।

যা এভয়েড করবেনঃ

  • ভাজা-পোড়া খাবার (সিঙ্গারা, সমুচা, পুরি, পরোটা, ফাস্টফুড)
  • ঘি, মাখন, কেক, বিস্কুট, চকলেট, চানাচুর
  • লাল মাংস (গরু, খাসি)
  • চিনিযুক্ত খাবার (মিষ্টি, আইসক্রিম, কোমল পানীয়, মিষ্টি দুধ, কেক)
  • বেশি চাল, আলু, নুডলস, পাস্তা
  • ধুমপান (যদি কেউ খান, সম্পূর্ণ বন্ধ করতে হবে)

আরেকটা কথা, অনেকেই ডায়েটিং করে জিরো ফিগার করে ফেলেন। শরীরের মাংস চর্বি কিছুই থাকে না। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, ওজন অনুযায়ী শরীরে মাংস থাকা কিন্তু ভালো। কারণ, আপনি যদি অতিরিক্ত চিনি/কার্ব ইনটেক করেন, তবে অতিরিক্ত চিনি লিভার বা ধমনীতে জমার আগেই  রক্তের মাধ্যমে মাংস তা নিজের মধ্যে শুষে নেয়। ফলে লিভারে জমার জন্য এক্সট্রা চিনি আর অবশিষ্ট থাকে না বা কম থাকে। (অবশ্যই মাংসের একটা ধারণক্ষমতা আছে, চিনির লিমিট তার বাইরে গেলে তা লিভারে জমবে)

এছাড়া

  • সাইক্লিং, সাতার, ব্যায়াম, ফুটবল বা অন্যান্য খেলাধুলা
  • প্রতিদিন ৩০–৪৫ মিনিট হাঁটা
  • ওজন নিয়ন্ত্রণ (যদি বেশি থাকে)
  • রাতে দেরি করে খাওয়া কমান
  • নিয়মিত ঘুম (৬–৮ ঘণ্টা)

পরিশেষে বলতে চাই, রোগ ধরা পড়ার আগে সচেতনতাই কাম্য। কারণ, প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ উত্তম। 

Post a Comment

Previous Post Next Post