প্রিডেটরি জার্নালের ইনভাইটেশন কিভাবে চিনবেন?

প্রিডেটরি জার্নালের ইনভাইটেশন কিভাবে চিনবেন?

গবেষণার পথচলা শুরু হতেই প্রতিনিয়ত বিভিন্ন জার্নাল থেকে আকর্ষণীয় ইনভিটেশনের ইমেইল আসতে শুরু করে। মানসম্পন্ন জার্নালের পাশাপাশি অনেক সময় একইসঙ্গে অনেক প্রিডেটরি বা ভুয়া জার্নাল থেকেও ইমেইল আসে যা নতুন গবেষকদের জন্য বিভ্রান্তিকর হয়ে দাঁড়ায়। এসব ইমেইলে প্রায়শই লেখা থাকে যে আপনার সাম্প্রতিক গবেষণা অত্যন্ত প্রশংসনীয়, আপনার পরবর্তী আর্টিকেল আমাদের জার্নালে প্রকাশ করুন। কখনো বলা হয় নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে সাবমিট করলে পাবেন প্রকাশনা ফিতে বিশেষ ছাড়। অনেক সময় তারা উল্লেখ করে, আমাদের চলতি সংখ্যাটি সম্পূর্ণ করতে আপনার একটি মাত্র পেপার দরকার। আবার কোথাও লেখা থাকে, এখনই সাবমিট করলে পাবেন ৫০ শতাংশ ছাড় অথবা সম্পূর্ণ ফি মওকুফ। এর সঙ্গে যোগ করা হয় rapid acceptance অথবা guaranteed acceptance-এর মতো প্রলোভনমূলক প্রতিশ্রুতি যা মূলত লেখককে দ্রুত আকৃষ্ট করতেই তৈরি করা। 

সবচেয়ে চিন্তার বিষয় হলো, এই প্রিডেটরি জার্নালগুলোর নাম অনেক সময় এতটাই আকর্ষণীয় ও বিশ্বাসযোগ্যভাবে সাজানো থাকে যে, নাম দেখেই অনেকে মনে করেন এটি কোনো পরিচিত ও মানসম্পন্ন জার্নাল। অনেক ক্ষেত্রে তারা সুপরিচিত জার্নালের নামের মধ্যে মাত্র একটি বা দুটি শব্দ পরিবর্তন করে একই ধরণের নাম ব্যবহার করে, যেন মূল জার্নালেরই একটি অংশ মনে হয়। উদাহরণস্বরূপ, Journal of Biomedical Science-এর পরিবর্তে তারা ব্যবহার করে Journal for Biomedical Sciences, অথবা International Journal of Clinical Research-এর জায়গায় তৈরি করে International Clinical Research Journal। নামের এই সামান্য পার্থক্য এতটাই সূক্ষ্ম যে বিস্তারিত যাচাই না করলে আসল ও নকলের পার্থক্য করা কঠিন হয়ে পড়ে।

প্রিডেটরি জার্নাল থেকে আসা ইমেইলের কিছু সাধারণ বৈশিষ্ট্য রয়েছে যেগুলোর প্রতি সতর্ক নজর রাখলে প্রতারণা থেকে বাঁচা সম্ভব। যেমন:

১। ইমেইলগুলো সাধারণত অপ্রফেশনাল, বানানে ভুল এবং অগোছালো ভাষায় লেখা হয়।

২। সম্বোধনে থাকে Dear Dr., Respected Researcher বা Esteemed Professor, কিন্তু প্রাপকের নাম বা পরিচিতি সঠিকভাবে উল্লেখ থাকে না।

৩। প্রকাশনা ফি (APC) মওকুফ বা ৫০%-৭০% ছাড়ের লোভনীয় প্রস্তাব দেওয়া হয়।

৪। পেপার সাবমিট করলে accept হবে বা guaranteed publication এর প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়।

৫। বলা হয় আমাদের সংখ্যাটি সম্পূর্ণ করতে আপনার একটি মাত্র পেপার দরকার।

৬। ইমেইলে বড় করে ভুয়া বা জাল impact factor উল্লেখ করা হয়।

৭। বিভ্রান্তিকরভাবে লেখা হয় যে জার্নালটি Web of Science, Scopus, PubMed বা DOAJ-এ ইনডেক্সড।

৮। ISSN নম্বর সন্দেহজনক, যাচাই করলে দেখা যায় এটি অন্য জার্নালের বা ভুয়া।

৯। ইমেইলের বিষয়বস্তু (subject) হয় অদ্ভুত।

১০। অধিকাংশ সময় ইমেইলে লেখা থাকে জার্নাল USA, UK বা Europe থেকে প্রকাশিত।

১১। ইমেইলে সরাসরি file submission করার আহ্বান থাকে এবং কোনো অথেনটিক submission system থাকে না।

১২। ইমেইলের ডোমেইন প্রফেশনাল জার্নালের মতো হয় না ।

১৩। অনেক সময় বিখ্যাত গবেষকদের নাম ও পরিচয় চুরি করে ব্যবহার করা হয় যেন জার্নালটি বিশ্বাসযোগ্য ও মানসম্পন্ন মনে হয়। ।

১৪। জার্নালের বিভ্রান্তিকর নাম থাকে, যেমন: “International”, “Global”, “Modern”, “Advanced” যা বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়াতে ব্যবহৃত হয়।

১৫। জার্নাল নাম অনেক সময় পরিচিত জার্নালের সঙ্গে খুব মিল রেখে বানানো হয়, যেমন: এক বা দুই শব্দ পরিবর্তন করে মূল জার্নালের অনুকরণে।

১৬। ইমেইলের মধ্যে কোনো বৈজ্ঞানিক বিষয় বা গবেষণার মান নিয়ে আলোচনা থাকে না, শুধুই প্রচারণামূলক কথাবার্তা থাকে।

১৭। প্লেজিয়ারিজম চেকের কোনো ব্যবস্থা থাকে না।

১৮। ইমেইলে প্রকাশনার জন্য সময়সীমা বেঁধে দিয়ে বলা হয় “Submit within 2 days” বা “Last call for immediate acceptance।”

১৯। অনেক সময় Editor-in-Chief বা Reviewer হিসেবে যুক্ত হওয়ার আমন্ত্রণ জানিয়ে প্রভাবিত করার চেষ্টা করা হয়।

২০। বারবার follow-up ইমেইল পাঠিয়ে চাপ প্রয়োগ করা হয়।

২১। একই ইমেইল কয়েকজন গবেষককে একসাথে পাঠানো হয়, অনেক সময় অন্য কারও নাম বা ইমেইল ঠিকানাও তাতে থেকে যায়।

২২। ইমেইলের মধ্যে Web of Science, Scopus, PubMed Indexed লেখা থাকে।

২৩। ইমেইলের signature অংশে যোগাযোগের ঠিকানা, ফোন নম্বর বা অফিসিয়াল পদবি অস্পষ্ট বা ভুয়া হয়।

২৪। জার্নালের ওয়েবসাইটে গেলে অধিকাংশ লিংক কাজ করে না অথবা জার্নালের সংখ্যা ও প্রকাশিত পেপার অস্বাভাবিক।

২৫। কিছু ইমেইলে Co-authorship opportunity নামে লোভনীয় প্রস্তাব দেওয়া হয়।

২৬। ইমেইলে Discount Offer বা Special Issue Call নাম দিয়ে ব্যবসায়িক প্রচার চালানো হয়।

২৭। ইমেইলে Quick, Fast-track, Rapid ইত্যাদি শব্দের ব্যবহার দেখা যায়।

২৮। কিছু ক্ষেত্রে জার্নালের প্রকাশকের নাম এমনভাবে সাজানো থাকে যাতে তা নামী প্রকাশকের মতো মনে হয় (যেমন: Science Publishing Group, Nature Journal Press ইত্যাদি)।

কোনো জার্নালের ইনভাইটেশন এলে যাচাই-বাছাই কীভাবে করবেন:

১। প্রথমেই যাচাই করুন জার্নালটি Web of Science (WoS)–এ ইনডেক্সড কিনা:

🔗 https://mjl.clarivate.com/search-results

২। Scopus–এ ইনডেক্সড কিনা তাও যাচাই করুন:

🔗 https://www.scopus.com/sources

৩। Beall’s List–এ আছে কিনা খেয়াল করুন:

Beall's List হলো প্রিডেটরি বা প্রতারণামূলক জার্নালের তালিকা।

🔗 https://beallslist.net/

৪। Think. Check. Submit. গাইডলাইন অনুসরণ করুন

🔗 https://thinkchecksubmit.org/

Post a Comment

Previous Post Next Post