সৌদি আরবে একদিন আগে ঈদ হয় কেন ?

চাঁদের পৃথিবীর চারদিকে একবার ঘুরে আসতে সময় লাগে গড়ে প্রায় ২৯.৫৩ দিন । ফলশ্রুতিতে চন্দ্রমাস হয় ২৯ বা ৩০ দিনে ।


মজার ব্যাপার হল, চন্দ্রমাস নির্দিষ্ট নয় । ফলে মুসলিমদেরকে রমজান ও ঈদ পালন করতে চাঁদ দেখতে হয় । এই অনির্দিষ্টতার কারণে চন্দ্রবছরও আলাদা হয় । কোনো বছর ৩৫৪, আবার কোনো বছরে ৩৫৫ দিন হয় । অর্থাৎ এটি গ্রেগরীয় বা সৌরবর্ষ থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন এবং অনন্য । এবং এখানেও সূর্যের কোন কাজ নেই । যদিও চন্দ্রবর্ষে সূর্য ডোবার পর নতুন দিন গণনা শুরু হয় । অর্থাৎ রাত আগে আসে, তারপর দিন ।


আসা করছি বিষয় দুটো পরিষ্কার । তবে এবার মূল বিষয়ে আলোচনা করা যাক ।


সময়ের বিশাল তারতম্য :

শুরুতে যেই প্রশ্নটা ছিল সেটাই আবার আলোচনা করি । হিসেব অনুযায়ী সৌদি আরব থেকে বাংলাদেশ ৩ ঘণ্টা এগিয়ে । এতে বরং বাংলাদেশ ৩ ঘণ্টা আগে চাঁদ দেখবে । কিন্তু তা তো হয়ই না, উল্টো সৌদি আরবে একদিন আগে রমজান, ঈদ শুরু হয়ে যায় সাধারণত ।


এর উত্তরের সঙ্কেত উপরে খানিকটা দিয়েছিও । সমস্যা হল, আমরা সৌর ও চন্দ্রের হিসেবকে মিলিয়ে ফেলি । সৌর হিসেবে সৌদি আরবের সাথে আমাদের পার্থক্য মাত্র ৩ ঘণ্টা হলেও চন্দ্রের হিসেবে সৌদি আরব ও আমাদের পার্থক্য ২১ ঘণ্টার!


কি, অবাক হচ্ছেন? অবাক হওয়ারই কথা। এটা কিভাবে হল, বুঝতে পারছেন না নিশ্চয়ই ? চলুন জেনে নিই বিষয়টা ।


পৃথিবীর গতির কথা তো জানিই । পৃথিবী নিজের অক্ষের চারিদিকে পশ্চিম থেকে পূর্বে ঘুরে চলেছে প্রতিনিয়ত যাকে আহ্নিক গতি বলি । গতিটা সহজে বোঝা যাবে ঘড়ির কাঁটার বিপরীত দিক বা অ্যান্টি ক্লকওয়াইজ (Anti Clockwise) বললে । চাঁদ তো ধীরে ধীরে আবর্তন করছে । ফলশ্রুতিতে প্রতিদিন পশ্চিম দেশ সবার আগে চাঁদ দেখতে পায় । আমরা তো জানিই সূর্যোদয় হয় পূর্ব থেকে, তবে চাঁদের ক্ষেত্রে উল্টো । যদিও চাঁদ পূর্বে উঠে পশ্চিমে অস্ত যায়, তবুও পশ্চিমারা চাঁদের আলো সবার আগে পায় ।


কোনো এক দেশে চাঁদ দেখা গেলেও অন্য দেশে দেখা যেতে দেরি হতে পারে । কেননা খালি চোখে চাঁদকে দেখতে হলে চন্দ্র আর সূর্যের মাঝে ১০.৫ ডিগ্রি কোণ থাকতেই হবে । এবং যে পরিমাণ দূরত্ব অর্জন করলে এই কোণ তৈরি হবে, সে পরিমাণ যেতে যেতে চাঁদের ১৭ থেকে ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত লেগে যায় । এ কারণেই আজ আমেরিকাতে চাঁদ দেখা গেলেই যে বাংলাদেশেও দেখা যাবে, সেটা ভুল ধারণা । যতক্ষণ না পর্যন্ত সেই কোণ অর্থাৎ ১০.৫ ডিগ্রি অর্জন না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত চাঁদ দেখা যাবে না । একই বিষয় সৌদি আরব ও বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও । এই সংকট কোণকে ইলঙ্গেশন (Elongation) বলে । তাই চাঁদের বয়স কত সেটা আদৌ আসল কথা নয়, সেই কোণ হয়েছে কিনা সেটার উপর নির্ভর করে চাঁদ দেখা যাবে কিনা ।


ফলে আমরা সৌদি আরব থেকে ৩ ঘণ্টা সূর্যের হিসেবে এগিয়ে থাকলেও, চাঁদের হিসেবে ২১ (২৪-৩=২১) ঘণ্টা পিছিয়ে আছি । ২১ ঘণ্টা প্রায় ১ দিন । অর্থাৎ আমরা প্রায় একদিন পিছিয়ে আছি । সেজন্যই সৌর বছরের হিসেবে একদিন পরে চাঁদ দেখি । তবে চন্দ্র বছরের কথা বললে আমরা সবাই একই দিনেই সব করি । তাই কারো এমনটা ভাবার কিছু নেই যে সবাই ভিন্ন দিনে রমজান বা ঈদ পালন করে । সবাই একই দিনেই পালন করে । কিন্তু সেটা যদি ইংরেজি বর্ষপঞ্জি দিয়ে যাচাই করেন, সেটা নিতান্তই বোকামি হবে ।


শেষ কথা হল, চন্দ্রবর্ষ অনুযায়ী পুরো পৃথিবীর সকলেই একই দিনে রমজান, ঈদ পালন করে । শুধু টাইমজোন (Timezone) আলাদা বলে আগে-পরে এমনটা মনে হয় ।

Post a Comment

Previous Post Next Post