বাংলাদেশে কি তুষারপাত হওয়া সম্ভব ?

উত্তরটা হ্যাঁ আবার না। মানে এখন সম্ভব না হলেও সুদূর ভবিষ্যতে সম্ভব হলেও হতে পারে৷ সুদূর মানে আসলেই সুদূর। আগে বলি এখন কেন তুষারপাত হয় না। রাশিয়ার সাইবেরিয়া থেকে আসা বরফ শীতল বাতাস দক্ষিণে এসে হিমালয়ে আটকে যায়৷ ফলে যতটুকু বাতাস আসে তাতে হাড় কাঁপুনে শীত পড়লেও তাপমাত্রা শূন্যের নিচে নামে না, তাই তুষারপাতও হয় না৷ আরেকটা কারণ ক্রান্তীয় আবহাওয়া যার কারণে শীতে বাংলাদেশের বাতাস অনেক শুষ্ক থাকে৷

বাংলাদেশে কি তুষারপাত হওয়া সম্ভব ?


এবার আসি 'হ্যাঁ' নিয়ে৷ কয়েক বছর আগে ২০৩০ সালে 'ছোট তুষারযুগ' (Mini Ice Age) আসবে বলে একটা খবর ছড়িয়েছিল৷ এই 'ছোট তুষারযুগ' হবার কারণ হিসেবে সৌরচক্রকে দায়ী করা হয়। সূর্যের কার্যকলাপ ১১ বছরের চক্রে চলমান থাকে। এই ১১ বছরে কার্যকলাপ সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছালে তাকে সোলার মিনিমাম এবং সর্বোচ্চ পর্যায়ে পোঁছালে সোলার ম্যাক্সিমাম বলে৷ বর্তমানে সূর্য ২৫ নম্বর চক্রে আছে যা ২০১৯ সাল থেকে সোলার মিনিমাম শেষ হবার পর শুরু হয়েছে, শেষ হবে এর ১১ বছর পর ২০৩০ সালে। তখন হবে আরেকটি সোলার মিনিমাম৷ 


এই মিনিমাম আর ম্যাক্সিমাম পর্যবেক্ষণ করা হয় সূর্য পর্যবেক্ষণ করে তাতে কতগুলো সৌরকলঙ্ক দেখা যাচ্ছে তার উপর ভিত্তি করে। সৌরকলঙ্ক যত বেশি দেখা যাবে সূর্য তত সক্রিয়। ২০৩০ সোলার মিনিমামের পরে সূর্য যখন ২৬ নম্বর চক্রে যাবে তখন সৌরকলঙ্কের সংখ্যা গড়ের চেয়েও নেমে যাবে বলে গণনা করে বের করা হয়েছে৷ একে 'গ্র্যান্ড সোলার মিনিমাম' বলা হচ্ছে৷ এরপর ২০৫০ সালের মধ্যে সূর্যের কার্যকলাপ গড়ের চেয়েও নেমে যাওয়ায় পৃথিবী তাপ কম পাবে এবং ছোট তুষারযুগ হবে। 


কিন্তু এখানে একটা সমস্যা আছে। ১৬৪৫ - ১৭১৫ সালে যে গ্র্যান্ড সোলার মিনিমাম হয়েছিল তা মন্ডার মিনিমাম নামে পরিচিত৷ তখন গড়ে যেখানে এক চক্রে ৪০,০০০ এর মতো সৌরকলঙ্ক তৈরি হবার কথা, সেখানে মাত্র ৫০ টির মতো তৈরি হয়েছিল। সে সময় তুষারযুগ এসেছিল। তবে অনেকের মতে সূর্য যেখানে এত বড় সেখানে সোলার মিনিমামের ফলে পৃথিবীতে তাপমাত্রা কমলেও সেটা আশঙ্কাজনক হবে না। অনেকের মতে এই মন্ডার মিনিমামের সময়ে তুষারযুগে আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের সম্পৃক্ততা আছে৷ অগ্ন্যুৎপাতের ফলে নির্গত সালফার সূর্যের তাপ আটকে পৃথিবীর তাপমাত্রা কমিয়ে দিতে পারে৷ সুতরাং ২০৩০ - ২০৫০ এর সোলার মিনিমাম যে বাংলাদেশে তুষারপাত ঘটাবে তার সম্ভাবনা শূন্যের কাছাকাছি৷ তখন সোলার মিনিমামের পাশাপাশি আর কী কী ঘটবে তা তো এখনই বলা যায় না, তাই 'কাছাকাছি' বলা হয়েছে৷ 


বাংলাদেশে নিশ্চিতভাবে তুষারপাত ঘটবে তুষার যুগে। তুষার যুগ বলতে আমরা যেটা বুঝি সেটা সত্য নয়। পৃথিবীর দুই মেরুতে বরফের উপস্থিতিই হলো তুষার যুগ৷ সুতরাং পৃথিবী বর্তমানে তুষার যুগেই আছে যার নাম কোয়ার্টারনারি গ্ল্যাসিয়েশন৷ বর্তমানে গ্লেশিয়াল মিনিমাম চলছে৷ পৃথিবীর তাপমাত্রা বেড়ে এখন মেরু বরফ গলে ক্রমাগত কমছে যা মানুষের কর্মকাণ্ডে ত্বরান্বিত হচ্ছে। প্রায় ৫০,০০০ বছর পর পৃথিবী আবার গ্লেশিয়াল ম্যাক্সিমাম পর্যায়ে যাবে এবং মেরু বরফের পরিমাণ অনেক বেড়ে উত্তরে ইউরোপ ও কানাডা-যুক্তরাষ্ট্র সীমানা পর্যন্ত এবং দক্ষিণে দক্ষিণ আমেরিকার অংশবিশেষ ও দক্ষিণ আফ্রিকা পর্যন্ত চলে আসবে।


বাংলাদেশে বাৎসরিক গড় তাপমাত্রা অনেক নেমে যাবে। সে সময় গ্লেশিয়াল ম্যাক্সিমাম কতটুকু অগ্রসর হবে তার উপর বাংলাদেশে কতটুকু তুষারপাত হবে তা নির্ভর করবে।

Post a Comment

Previous Post Next Post