হাইজেনবার্গের অনিশ্চয়তা নীতি

এই বিষয়টা নিয়ে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে বিভিন্ন প্রকার দ্বিধাদন্দ কাজ করে। অনেকের মতে, এ কেমন নীতি? যে যেই বিজ্ঞানীএটা আবিষ্কার করছে সে নিজেই নিশ্চিত না। আবার অনেকের মনে ক্ষোভ আছে যে বিজ্ঞানী সে নিশ্চয়তা না দিয়ে নীতি দিয়ে দিছে আর সেই অনিশ্চয়তার নীতি তাদের কষ্ট করে পড়তে হচ্ছে। আচ্ছা আমরা আরেকবার এই নীতিটা নিয়ে কিছুটা কথাবার্তা বলি দেখি কিছু বুঝা যায় কিনা! 

hugenberg uncertainty principle


এই নীতির বিবৃতিতে বলা আছে-

"কোনো কণিকার অবস্থান এবং ভরবেগ, একইসাথে নিখুঁতভাবে জানা সম্ভব না। অবস্থান নিখুঁতভাবে পরিমাপ করতে গেলে ভরবেগের মানে ভুলের পরিমাণ বাড়বে, আবার ভরবেগ নিখুঁতভাবে পরিমাপ করতে গেলে অবস্থানের মানে ভুলের পরিমাণ বাড়বে।"

যথারীতি পোলাপান এই কথা শুনে বাংলা অভিধান খোজা শুরু করে দিছে। আচ্ছা দেখি কথাগুলারে সহজ ভাবে বলা যায় কিনা। আচ্ছা কিছু বাস্তব খোশগল্প করা যাক।


আমরা আমাদের বাসার ডাইনিং টেবিলে যদি একটু হাত বুলাই তাহলে কত সুন্দর মসৃণ মনে হয় টেবিলটাকে। কিন্তু অণুবীক্ষণ যন্ত্রের নিচে দেখলে টেবিলের পৃষ্ঠতলে অসংখ্য খাঁদ দেখা যাবে। এখানে কাহিনী টা হলো অনুবীক্ষন যন্ত্রের আলো টেবিলের উপরে পড়লে এর মসৃণতার মুখোশ উন্মোচিত হয়। আচ্ছা যেহেতু কোয়ান্টাম মেকানিক্স এ আমরা আছি তাই আলো না বলে ফোটন বলি তাহলে একটু ভাব সাব থাকবে। তাহলে এর দ্বারা আমরা বুঝতে পারি অণুবীক্ষণ যন্ত্রের ফোটন আমাদের হাতের চেয়ে অনেক বেশি কার্যকরী। একিভাবে একটি গতিশীল ইলেকট্রনের অবস্থান জানতে যদি ফোটন নিক্ষেপ করি, ইলেকট্রনের ভরবেগ ফোটনের সাথে সংঘর্ষের কারণে পালটে যাবে।


ইলেকট্রনের ভরবেগ সঠিকভাবে জানতে এমন ফোটন দরকার যার শক্তি কম বা দুর্বল , যাতে এটা ইলেকট্রনটির ভরবেগকে বিরক্ত করতে না করতে পারে। কিন্তু ঝামেলা হলো ফোটনের শক্তি এর কম্পাঙ্কের সমানুপাতিক। অর্থাৎ, কম শক্তির ফোটনের কম্পাঙ্ক কম তথা তরঙ্গ দৈর্ঘ্য বেশি হবে। এমন বড়সড় ফোটন ইলেকট্রনের অবস্থান ঠিকভাবে নির্ণয় করতে ব্যর্থ হবে, যেমন আমাদের হাত ব্যর্থ হয় টেবিলের অমসৃণ পৃষ্ঠকে অণুধাবন করতে। আবার আমরা যদি ছোট(তরঙ্গ দৈর্ঘ্য কম তথা কম্পাঙ্ক বেশী) ফোটন ব্যবহার করি, তাহলে অণুবীক্ষণ যন্ত্রের মত, এটা ইলেকট্রনের অবস্থান ভালোভাবে নির্ণয় করলেও, এমন ফোটনের শক্তি বেশী থাকায় ইলেকট্রনের ভরবেগ পালটে দেবে। অর্থাৎ ইলেকট্রনের ভরবেগ নিশ্চয়তার সাথে কোনভাবেই নির্ণয় করা যায়না। প্লাংকের ধ্রুবক খুব ছোট বলে বাস্তব জীবনে অনিশ্চয়তা সূত্র আমরা অনুভব করি না বললেই চলে।কিন্তু আনুবীক্ষণিক জগতে অনিশ্চয়তা সূত্রের সত্যতা খুব ভালভাবে লক্ষ্য করা যায়।


এইবার বুঝা গেছে? যে অনিশ্চয়তার নীতির ক্ষেত্রে আসলে এর উদ্ভাবকের অনিশ্চয়তার জন্য তৈরী হয়নি। ফোটন ব্যবহার করে ভরবেগ নির্নয়ে অনিশ্চয়তার জন্য এই নীতির নাম অনিশ্চয়তা নীতি। আর জার্মান পদার্থবিদ ওয়ার্নার হাইজেনবার্গ এই মৌলিক নীতিটি আবিষ্কার করেন তাই এর নাম "হাইজেনবার্গের অনিশ্চয়তা নীতি"।

Post a Comment

Previous Post Next Post